বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ০৯:০০:৫৪

ভারতে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মুসলিম তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা

ভারতে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মুসলিম তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ভারতে ২০ বছর বয়সী মুসলিম তরুণী গুলনাজ খাতুনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে শাতিশ কুমার রায় এবং তার সঙ্গীরা। গুলনাজের পরিবার এ তথ্য জানিয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যের ভাইশালি জেলায় নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। 

নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গুলনাজের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা, নারী অধিকারকর্মী এবং সাধারণ মানুষ। ৩০ অক্টোবর বিহারের রসুলপুর গ্রামে গুলনাজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। রোববার (১৫ নভেম্বর) তিনি মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অবহেলা করেছে। চিহ্নিত দোষীরা হলো: শাতিশ কুমার রায়, চন্দন এবং বিনোদ রায়। ৭৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় গুলনাজকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে রাজ্যের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পাটনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।

তার পরিবার জানায়, গুলনাজের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তাদের অ্যাংগেজমেন্টও সম্পন্ন হয়। চার মাস পরে বিয়ের দিন ধার্য ছিল। ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, গুলনাজকে শাতিশ কুমার বিয়ের জন্য উত্যক্ত করত। কিন্তু ভিন্নধর্মের কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না বলে তা প্রত্যাখ্যান করেন গুলনাজ। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শাতিশ ও তার সঙ্গীরা তাকে হত্যা করে।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, বাড়ির পাশে লাকড়ি কুড়াতে গিয়েছিলেন গুলনাজ। সেখানে একা পেয়ে শাতিশ এবং সঙ্গীরা তাকে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে দেওয়া ভিডিও বিবৃতিতে গুলনাজ জানান, তিনজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। যৌন নির্যাতন করে। তাদের সবার বাড়ি রসুলপুরে।

জীবন বাঁচাতে প্রতিরোধ এবং গুলনাজ তার মাকে নির্যাতনের কথা বলে দেওয়ার ভয় দেখালে অভিযুক্তরা তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিবৃতিতে শাতিশ কুমার রায়ের নাম স্পষ্ট করে জানান গুলনাজ। সে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলেও জানান তিনি। 

ভাইশালি জেলার পুলিশ সুপার গৌরব মাংলা জানান, অভিযুক্তরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের তিনটি টিম কাজ করছে। অভিযুক্তদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি। কর্তব্যে অবহেলার দায়ে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন প্রধানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

২০১৭ সালে গুলনাজের বাবা মুখতার মারা যান। গুলনাজরা ৫ বোন এবং তার ৪ ভাই। মা শাইমুনা খাতুন এবং ভাই ইসতকার আহমেদের আয়ে তাদের সংসার চলে। রাজ্যের রাজধানী পাটনায় তারা কাজ করেন। গুলনাজের মা কাপড় সেলাই করেন। আর ভাই কাপড় বিক্রি করেন।

অভিযুক্তদের পরিবারের নিকট ভুক্তভোগী গুলনাজের পরিবার হয়রানির অভিযোগ জানিয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তের পরিবার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গুলনাজের ভাই ইসতকার জানান, বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর শাতিশ তাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। গুলনাজ তাকে বিয়ে করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গুলনাজকে হত্যার হুমকি দেয় শাতিশ।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে