বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৬:২৪:১৪

চীনে উইঘুর মুসলিমদের জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছে

চীনে উইঘুর মুসলিমদের জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের এক স্বনামধন্য আইফোন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উইঘুরের মুসলিমদের জোরপূর্বক কারখানায় কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থার নথিতে এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে। এর ফলে চীনে অ্যাপলের মানবাধিকার রেকর্ডে নতুন তদন্ত যুক্ত হল।

টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্ট নামের এই মানবাধিকার সংস্থার নথিটি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট। চীনের লেন্স টেকনোলজি কীভাবে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মুসলিম শ্রমিককে জোর করে কাজে পাঠিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে নথিতে। লেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে অনুযায়ী, তারা আমাজন ও টেসলাকেও সরঞ্জাম সরবারহ করে।

অ্যাপলের সরবরাহ ব্যবস্থার অন্তত পাঁচটি কোম্পানির একটি হল লেন্স টেকনোলজি। অ্যাপলের সরঞ্জাম তৈরিকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেন্স টেকনোলজি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আইফোনের প্রথম দিককার সময় থেকে লেন্স তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে। লেন্স টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা ঝৌ কুনফেই চীনের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং বর্তমানে দেশটির সবচেয়ে ধনী নারী।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাপলের মুখপাত্র জশ রোসেনস্টক বলেছেন, লেন্স টেকনোলজি উইঘুর থেকে কোনো শ্রমিক আনেনি তা অ্যাপল নিশ্চিত করেছে। তিনি আরও বলেন, এ বছরের শুরু দিকে অ্যাপল নিশ্চিত করেছে যে তাদের কোনো সরবরাহকারী উইঘুরের শ্রমিকদের ব্যবহার করেনি।

তিনি বলেন, ''বাধ্যতামূলক শ্রমের ব্যাপারে অ্যাপলের জিরো টলারেন্স রয়েছে। বাধ্যতামূলক শ্রমের উপস্থিতি আছে কিনা তা সরবরাহকারীদের মূল্যায়নের প্রতিটি প্রক্রিয়ায় খুঁজে দেখা হয়, এর মধ্যে আকস্মিক অডিটও রয়েছে। কোনো ব্যক্তির চাকরি বা স্থান নির্বিশেষে এই সুরক্ষা অ্যাপলের সকল সরবরাহ ব্যবস্থাতেই প্রয়োগ করা হয়। আমাদের নীতি ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যার মধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়াও রয়েছে। সবসময়ের মতোই আমাদের লক্ষ্য হল প্রত্যেকের মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করা এবং আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় শ্রমিকদের সুরক্ষায় যা দরকার হয় তা আমরা করে যাব।''

এ বিষয়ে লেন্স টেকনোলজি থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। টেসলাকে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি। আমাজনের মুখপাত্র সামান্থা ক্রুজ মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওয়াশিংটন পোস্ট এ বিষয়ে বেইজিংয়ে অবস্থিত চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্সের মাধ্যমে প্রশ্ন করলে তারা চীনে বাধ্যতামূলক শ্রমকে 'অস্তিত্বহীন' বলে মন্তব্য করেন। 'ভিন্ন উদ্দেশ্যে' এই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তারা। 

তারা বলেন, অনেকগুলো কোম্পানি তদন্ত পরিচালনায় অডিটর ভাড়া করেছে যারা বাধ্যতামূলক শ্রম না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কোম্পানিগুলোর নাম মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেনি। অ্যাপলের হাজার হাজার সরঞ্জাম বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে থাকে। কিছু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপেক্ষাকৃত ছোট এবং অ্যাপলের সঙ্গে মধ্যবর্তী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বড় সরবরাহকারীদের সঙ্গে অ্যাপলের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। 

লেন্সও এদের মধ্যে একটি। অ্যাপলের সরবরাহকারীদের জন্য একটি কোড অব কন্ডাক্ট রয়েছে যেখানে উল্লেখ আছে, ২০১৯ সালে বিশ্বের ৪৯টি দেশের সরবরাহকারীদের তারা মূল্যায়ন করেছে এবং শ্রমের ভালো পরিবেশ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। তবে অডিট করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেন্স টেকনোলজিও রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে জানাতে অস্বীকার করে অ্যাপল।

এর আগেও, বিশেষত চীনে শ্রমের ব্যাপারে অ্যাপল সমালোচিত হয়েছে। ভারতেও অ্যাপলের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। সেখানে তারা একটি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলছে। চলতি মাসের শুরুতে দক্ষিণ ভারতে তাদের সরবরাহকারী উইস্ট্রনের সামনে হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো হয়ে কর্মস্থলের বাজে পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। উইস্ট্রনে কর্মস্থলের পরিবেশ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অ্যাপল রাজি হয়নি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে