আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মতোই কি ভুল করতে যাচ্ছেন সৌদি আরবের বাদশা সালমান। ইয়েমেনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর এবার সৌদি রাজ-সরকার কি আরেক রাজ-সরকার কুয়েতের সঙ্গেও যুদ্ধ শুরু করবে?
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কুয়েত দখল করে নেয়ার হুমকি দেয়ায় অনেকের মধ্যেই এই আশঙ্কা জোরদার হয়েছে।
‘খাফজি’ তেল-ক্ষেত্র নিয়ে মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকারের যুদ্ধমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন সালমান আরেক রাজতান্ত্রিক প্রতিবেশী কুয়েতের সঙ্গে যুদ্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। ‘মিডলইস্ট প্যানারোমা’ গোয়েন্দা সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে এই চাঞ্চল্যকর খবর দিয়েছে।
সালমান কুয়েত দখল করে নেয়ার হুমকি দিয়ে বলেছেন, কেবল খাফজি তেল-ক্ষেত্র নয়, গোটা কুয়েতই ঐতিহাসিক নানা দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে সৌদি ভূখণ্ডের অংশ।
তেল-সমৃদ্ধ দেশ কুয়েতের সরকার অভিযোগ করেছে যে, রিয়াদ খাফজি নামের অভিন্ন তেল-ক্ষেত্র বন্ধ করে রাখায় কুয়েত ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে এবং এ জন্য ভবিষ্যতে রিয়াদকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
খাফজি থেকে তেল উৎপাদনের কাজ শুরু করতে কুয়েতি তেলমন্ত্রী সৌদি তেলমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন।
কিন্তু কুয়েতের এ দাবিতে মহা-ক্ষিপ্ত করেছে সৌদি যুদ্ধমন্ত্রী সালমানকে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কুয়েতকে রক্ষা করেছিলাম সাদ্দামের থাবার হাত থেকে, আর এখন আমাদের থাবা থেকে কে তাদের রক্ষা করবে?’
সালমান আরও বলেছেন, ‘কুয়েত কোনো দিক থেকেই আমাদের চেয়ে এগিয়ে নেই এবং দেশটি এত ক্ষুদ্র যে তা রিয়াদেরও চারভাগের একভাগের সমান।’
কুয়েত ও সৌদি আরবের অভিন্ন তেল-ক্ষেত্র খাফজি গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই বন্ধ করে দেয় রিয়াদ। এর কারণ বা অজুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে যে এখানে তেল ওঠানো সৌদি আরবের পরিবেশ বিষয়ক নতুন স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে খাপ খায় না ।
কুয়েত বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলায় সৌদি আরবের তরুণ যুদ্ধমন্ত্রী আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। খাফজি বন্ধ করে দেয়ার আগে সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ ব্যারেল তেল ওঠানো হতো।
সৌদি আরব ও কুয়েতের অভিন্ন আরও একটি তেল-ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে আছে গত মে মাস থেকে। ওয়াফরা নামের এই তেল-ক্ষেত্র থেকে তেল ওঠানোর কাজে জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে মার্কিন কোম্পানি শেভরন এই খনির তেল উত্তোলন করত ।
মার্কিন সরকারের সবুজ-সংকেত পেয়েই সাদ্দাম ১৯৯০ সালের দোসরা আগস্ট তেল-সমৃদ্ধ কুয়েত দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু পরে মার্কিন সরকার কুয়েত উদ্ধারের নামে ইরাকের ওপর বহুজাতিক বাহিনী নিয়ে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির মুখে সাদ্দাম-বাহিনী কুয়েত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
ইরানের ওপর সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় সাদ্দাম সরকার কুয়েতের কাছ থেকে ব্যাপক ঋণ নিয়েছিল। কুয়েত এক পর্যায়ে ওই ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ার দাবি জানালে অর্থ-সংকটের শিকার সাদ্দাম কুয়েত দখলের সিদ্ধান্ত নেয় ও এ ব্যাপারে মার্কিন সরকারের মতামত জানতে চায়।