মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:২৭:১৩

সব প্রথা ভেঙে বাবার কফিন বইলেন মেয়ে

সব প্রথা ভেঙে বাবার কফিন বইলেন মেয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ঝান্ডা গুজরান৷ গত কয়েক ঘণ্টায় এ বাড়িতে চেনা-অচেনা মানুষের আনাগোনা৷ শীতের সকালে সেখানে যেন গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে৷ বাড়ির ভেতরে পড়শিরা বছর পঁচিশের একটি মেয়েকে ঘিরে বসে আছে৷ নিঃস্তব্ধ বাড়িতে গুমরে কান্নার শব্দ৷ চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাসে ভারী বাতাস৷ কমনওয়েলথ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে জোড়া পদক জয়ী সুবেদার ফতে সিংকে জীবদ্দশায় ক'জনই বা কদর করতেন, যা বলা মুশকিল। কিন্ত্ত এখন তিনি মৃত। সব প্রথা ভেঙে যার কফিন কাঁধে করে বইলেন মেয়ে মধু৷ সঙ্গে সেনারা৷ শেষকৃত্যের জায়গায় একমাত্র মেয়ে বলতে তিনিই ছিলেন৷ প্রচলিত প্রথা থেকে সরে এসে বাবার কফিনবন্দি দেহ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেনা এবং আত্মীয়দের সঙ্গে কাঁধ মেলান মধু৷ সাধারণত যে কাজ করে থাকেন বাড়ির ছেলেরা, মেয়ে হিসেবে মধু তাই করলেন৷ শেষকৃত্যের আগে সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাবার কফিন যে জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢাকা ছিল তা নেন তিনি৷ বাবার শেষ স্মৃতিতে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দেন৷ অস্ফুট স্বরে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বাবা বলতেন সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে৷ বলতেন, শুভ শক্তি সবসময় অশুভ শক্তিকে হারিয়ে দেয়৷ এ মূল্যবোধের জন্য তো নিজের জীবনটাও দিয়ে দিলেন উনি৷ বাবার মৃত্যুর খবর শুনে তিনি ও তার মা ঘণ্টা দু'য়েক সব আলো নিভিয়ে ঘরের মধ্যে শুয়েছিলেন৷ ভারতীয় খেলার এক পরিচিত নাম ফতে সিং কীভাবে সেদিন বাড়ি ছেড়েছিলেন স্পষ্ট মনে করতে পারেন মধু৷ সোমবার সাংবাদিকদের বলছিলেন, আমি মা আর ছোট ভাই আমাদের ছুটিতে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম পাঠানকোটেঅ বাবা ডিউটি থেকে ফিরে এসেছিলেন৷ হঠাত্‍ অ্যালার্ম বাজে৷ বাবা দ্রুত পোশাক পরে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে যান৷ মা তখন জিজ্ঞেস করেন, তুমি তো এখনই এলে, আবার যাচ্ছ কেন? বাবা বলেন, আমি যাচ্ছি কিছু কাগজে সই করতে৷ ফুঁপিয়ে কেঁদে এরপর জুড়ে দেন, ‘আমার বাবা যা করেছেন, অন্য কেউ তা করতে পারবেন না৷ আমি বাবার জন্য খুবই গর্বিত৷' কথা বলতে বলতে শুধুই গলা ধরে আসছে৷ পাঠানকোটের বিমানসেনা দপ্তরের গুলির শব্দ বাড়িতে বসে শুনেছিলেন ওরা৷ পেশায় ইংরেজির শিক্ষক মধু স্মৃতি হাতড়ে চলেছেন, বাবা নিচে গিয়ে মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিল৷ কিন্ত্ত যে দিকে ডিউটি ছিল সে দিকে না গিয়ে অন্য দিকে গেল৷ এরপরই আমরা বোমা পড়ার শব্দ শুনলাম৷ গুলির শব্দে আমরা কেঁপে উঠছিলাম৷ আমাদের জানালাতেও বুলেট এসে লেগেছে৷ আমি মাকে নিয়ে খাটের নিচে লুকোই৷ খুবই ঠান্ডা মেঝে৷ কষ্ট হচ্ছিল৷ কিন্ত্ত খাটে বসে থাকার ঝুঁকি নিইনি৷' নিজেকে সামান্য গুছিয়ে নিয়ে যোগ করলেন, এরপরই আমরা বাড়ির সব আলো নিভিয়ে দিই, যাতে সন্ত্রাসবাদীরা বাড়ির ভেতর দেখতে না পায়৷ তার পর ফের শুরু গুলির লড়াই৷ আমাদের জানালা কেঁপে উঠছিল বারবার৷ পরে জানলাম, বাবা একজনের বন্দুক কেড়ে তাকে গুলি করে৷ এরপর বাবার বুকে গুলি৷ কথা শেষ করতে পারলেন না তিনি৷ বাবার পথে হাঁটছেন মধুর বড় ভাই৷ যিনিও রয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে৷ এত কিছুর পরও মধু চান, তার ভাই সেনা বাহিনীতেই থাকুক৷ ৫ জানুয়ারি,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে