মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ০৬:৪৪:৪৭

এবারের বন্দি সু চি আগের সু চি নন

এবারের বন্দি সু চি আগের সু চি নন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেড় দশক গৃহবন্দি থাকার সময়ই জাতীয় নেতা থেকে আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে যান মিয়ানমারের অং সান সু চি। পেয়ে যান অনেক খ্যাতি; জুটে যায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও। ২০১০ সালে মুক্তি পান বন্দিদশা থেকে। এর পাঁচ বছর পরে হয় সাধারণ নির্বাচন, যার মধ্য দিয়ে অন্তত কাগজে-কলমে কয়েক দশকের সামরিক শাসনের ইতি ঘটে দেশটিতে।

আর ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে যায় সু চির দল 'ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি' (এনএলডি)। নির্বাচনে জেতার পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ করতালি জোটে সু চির। তার জয়কে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবেও মূল্যায়ন করেছিলেন অনেকে। কিন্তু দেশটিতে আবার সেনা শাসন শুরু হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হলো, সত্যিকারের গণতন্ত্র একটি নির্বাচনে জেতার চেয়েও বেশি কিছু।

মিয়ানমারের সংবিধান থেকে 'সামরিক শাসন' উঠে গেলেও সেখানকার রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আইনবলে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে 'যা খুশি তা-ই করার সুযোগ' সু চি কিংবা এনএলডি কখনো পায়নি। যদিও ক্ষমতার লোভ তুচ্ছ করে গণতন্ত্রের জয়গান করার চেষ্টা সু চি কতটা করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর ভূমিকা ছিল ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ করার ক্ষমতা সু চির হাতে খুব একটা ছিল না। কিন্তু এই ইস্যুতে সামরিক বাহিনীর পক্ষে তিনি যেভাবে সাফাই গেয়েছেন, তা শান্তিতে নোবেল পাওয়া সু চির কাছে প্রায় কেউই প্রত্যাশা করেনি। এমনকি রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণে অনেক সম্মাননাও হারিয়েছেন তিনি। এত কিছুর পরও মিয়ানমারের রাজনীতিতে সু চির জনপ্রিয়তা কমেনি বললেই চলে। 

অনেকের বিশ্বাস, বেসামরিক সরকার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সেনাবাহিনীর হয়ে কথা বলা ছাড়া সু চির সামনে আর কোনো উপায় ছিল না। বিশ্লেষকরা বলছেন, উপায় ছিল, নাকি ছিল না—সেই প্রশ্ন তার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়েছে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও বন্দি ছিলেন সু চি। এখন আবার বন্দি হলেন। তবে তখনকার প্রেক্ষাপটকে এখনকার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই।  তিনি আর এখন 'এশিয়ার ম্যান্ডেলা' নন। 

একসময় ঘনিষ্ঠতা থাকলেও অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের শিক্ষক থমাস ওয়েলস। তিনি বলেন, 'সু চির ব্যাপারে পশ্চিমাদের আগ্রহ অনেক কমে গেছে। এ জন্য তাঁর পক্ষে এখন পশ্চিমাদের সোচ্চার করা খুবই কঠিন হবে। বিশেষ করে, গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তাঁর পক্ষে যেভাবে সোচ্চার ছিল, ঠিক সেভাবে আর সোচ্চার হবে না তারা। আর এ বিষয়টি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীও ভালোভাবে জানে, তখনকার সু চি আর এখনকার সুচি এক নন।'

রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির অনেক জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এসব চাপের কারণে মিয়ানমার আরো বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডে সমর্থন আছে রাশিয়ারও। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের অধ্যাপক মেলিসা ক্রচ বলেন, 'মিয়ানমারের জেনারেলরা এটা ভাবতে পারেন যে পশ্চিমাদের বিরোধিতা টেক্কা দেওয়ার জন্য চীন ও রাশিয়াই যথেষ্ট। এ কারণে তারা হয়তো সামরিক অভ্যুত্থানের সাহসটা পেয়েছেন।' 

তিনি আরো বলেন, 'অভ্যুত্থানের কয়েক দিন আগেই রাশিয়া ও চীনের একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমার থেকে ঘুরে গেছে।' থমাস ওয়েলস মনে করেন, ''বাইরের শক্তির চেয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মোকাবেলা করাই সেনাবাহিনীর জন্য বেশি কঠিন হবে। কারণ দেশটির অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী বেসামরিক সরকারের পক্ষে। এ ছাড়া সু চির দলেরও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।'' সূত্র : সিএনএন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে