বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ০৪:৪১:৩০

রোহিঙ্গা সংকট ও প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশায় অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান!

রোহিঙ্গা সংকট ও প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশায় অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নেপালে সাংবিধানিক সঙ্কট রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উভয় সঙ্কটে ফেলতে পারে। সম্প্রতি রাজনৈতিক বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ অব মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) দুই সদস্য দেশ নেপাল এবং মিয়ানমার। এর ফলে দুটি দেশেরই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কৌশলে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। 

অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্টে এসব কথা লিখেছেন নেপালের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বিনোজ বাসনিয়াত। তিনি একজন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষকও। বিনোজ বাসনিয়াত লিখেছেন, দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে নেপালের প্রতিনিধি পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি। এর একটি কারণ হলো, নতুন দলের পরিবেশের মধ্যে তিনি কাজ করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। দ্বিতীয় কারণ হলো, জনগণ তার নেতৃত্বকে ভোট দিয়েছেন সরকার প্রধান হিসেবে।

এর কারণ হলো সেখানে দুটি কমিউনিস্ট পার্টির একত্রিত হওয়ার কারণে। অন্যদিকে বাংলাদেশে আটকে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়ার কারণে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনী হতাশায় পড়েছিল। তা ছাড়া জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার খায়েস। কিন্তু তার সে বাসনায় সমর্থন করছিল না সরকার। এ ছাড়া সরকার সংবিধান সংশোধন করার চেষ্টা করছিল, যাতে সেনাবাহিনীর দাপট খর্ব হয়।

বিনোজ বাসনিয়াত লিখেছেন, নেপালে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার ফলে সেখানে তীব্র রাজনৈতিক অসন্তোষ এবং রাজপথের বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দেশটি করোনা ভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়েছে ভারত। অন্যদিকে সেখানকার সুপ্রিম কোর্ট কি সিদ্ধান্ত দেয় সেদিকে তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নতুন প্রশাসন। তারা নতুন নীতির অধীনে এ বিষয়ে দৃষ্টি রেখেছে।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থান নিয়ে পর্যাবেক্ষণ করছে ভারত সহ গণতান্ত্রিক দেশগুলো। এক্ষেত্রে অন্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে এবং স্বার্থে হস্তক্ষেপ নয় এমন নীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে মূল্যায়ন ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে অবরোধ দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। 

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানো একটি বিবৃতি আটকে দিয়েছে চীন। সরকারের বিরুদ্ধে এই অসন্তোষ ও উত্তেজনার নেপথ্যে রয়েছে  পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড এবং মাধব কুমার নেপাল নেতৃত্বাধীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি। তাদের এই বিক্ষোভ থেকে নেপালের ভবিষ্যত নিয়ে চারটি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক ধারণা পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুটি নির্ভর করে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর। তৃতীয় সম্ভাব্য বিষয়টি হলো প্রতিনিধি পরিষদের চেয়ারপারসন পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। এই চেয়ারম্যান দাহাল-নেপাল অংশের সদস্য।

শেষ সম্ভাব্য বিষয়টি হলো দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং প্রেসিডেন্টের শাসন জারি করা। তবে এমন সযোগ খুব কমে গেছে বলে বলা হয়। যাই হোক, নেপাল তাদের বৈধ উদ্বেগের বিষয়ে বড় শক্তিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কৌশলগত উভয় সঙ্কটে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা আরো একবার জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের নেতৃত্বকে দুর্বল করেছে। একথা সত্য যে, নেপাল অনেক বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু নেতৃত্ব একই থেকেছে। এখন সামনে নেপাল দেখতে পারে রাজনৈতিক বিশৃংখলা, সীমিত আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি। 

এখানে সীমিত কথার অর্থ হলো, বিশৃংখলা দেখা দেবে কৌশলগত বড় বড় শহরে। দেশ যখন নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে তখন ছয়টি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক চ্যালেঞ্জে পড়বে দেশ। রাজনৈতিক দলগুলো জাতিগত দিক থেকে সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করবে। ধর্মভিত্তিক ও অন্যান্য চর্চার মানুষের মধ্যে সামাজিক সংঘর্ষের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। অন্য রাষ্ট্রীয় 'অ্যাক্টর'রা আভ্যন্তরীণভাবে অথবা নিকট প্রতিবেশিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সহ অনাকাঙ্খিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে। করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতির অবনমন আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। উপরন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে মেরুকরণ এবং বাম প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরো রাজনীতিকরণের মুখে পড়তে পারে। 

সর্বশেষ জনগণের রাজনৈতিক জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে। এমনিতেই প্রশাসনকে জনগণ দেখে রাজনৈতিক এবং দুর্নীতিবাজ হিসেবে। সুশাসনের উর্ধ্বে চলে গেছে রাজনীতি। আর্থিক সহায়তার সুবিধা পান শুধু ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশীয় জাতীয়তাবাদ বিদেশী বন্ধুদের সহায়তামূলক শুভেচ্ছাকে অতিক্রম করে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অনেক বড় বিষয়। দেশে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অংঙ্গ সংগঠনগুলো প্রভাব রাখে।

বিনোজ বাসনিয়াত আরো লিখেছেন, সবচেয়ে ভাল উপায় হলো একটি নতুন নির্বাচন। কিন্তু এক্ষেত্রে মৌলিক ইস্যু হলো নির্বাচনী প্রশাসন। এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। কি হবে নির্বাচনে? রাজনৈতিক বিভেদ বা হতাশার মূল কারণ অনুধাবন করা এবং এর মূল খুঁজে বের করা অত্যাবশ্যক। কিভাবে নির্বাচন হবে? রাজনৈতিক দলগুলো প্রচুর প্রতিশ্রুতি ও অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের চেষ্টা করবে। সম মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠন করে ম্যানিফেস্টো দেবে। 

নির্বাচন কে পরিচালনা করবে? এক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা আছে। এক হলো- বর্তমান সরকার, যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আরেকটি উপায় হলো, সব দল মিলে একটি নির্বাচনী সরকার গঠন করা। আর শেষ উপায় হলো, একজন বেসামরিক ব্যক্তি, যাকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন করবে, তিনি নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এমনটি একবার দেখা গিয়েছিল দেশের দ্বিতীয় নির্বাচনী গঠনতন্ত্র সংশোধনের সময়। কখন হবে নির্বাচন? রাজনৈতিক বোঝাপড়া হলে এক বছর পরে নির্বাচন হওয়া উচিত।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে