৬ জঙ্গি খতমে তিন বাহিনীর ৪ দিন লড়াই করতে হল কেন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৬ জন জঙ্গি মোকাবিলায় ভারতের মতো একটি দেশের সেনাবাহিনীর চার দিন সময় লাগলো কিন্তু কেন? এই প্রাণঘাতী হামলায় মাত্র ৬ জন হামলাকারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে ৭ জন সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো ২২ জন আহত হয়েছেন। এই প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরে সামনে আসছে দেশটির মানুষের কাছে। একইভাবে দেশটির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা এ জন্য অদক্ষ নেতৃত্ব আর সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করছেন।
পাকিস্তান সীমান্তের কাছে ভারতের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় চিরুনি অভিযান বুধবার শেষ হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেছেন, এখানে তাদেরও বেশ কিছু ঘাটতি ছিল— যদিও এই অভিযান মোটেই সহজ ছিল না।
কিন্তু মাত্র ছয়জন জঙ্গি মিলে কীভাবে ভারতের একটি সুরক্ষিত বিমানঘাঁটিকে এত লম্বা সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখতে পারল, এই প্রশ্ন সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলছে।
পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলা হতে পারে, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কাছে সে খবর পৌঁছেছিল ১ জানুয়ারি সকালেই। তার পরেও এই হামলার মোকাবিলায় ভারত যে চূড়ান্ত অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা প্রায় সবাই সে ব্যাপারে একমত।
স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট রাহুল বেদী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতের জবাবকে একটা বিপর্যয়ই বলা যেতে পারে— কারণ অভিযানের কমান্ড ও কন্ট্রালে একাধিক সংস্থা জড়িত ছিল। প্রথমে দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনী, এরপর ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড এবং শেষে বিমানবাহিনী। এই ধরনের অভিযানে একটার বেশি কমান্ড সেন্টার কিছুতেই থাকতে পারে না— অথচ তিন-তিনটি সেন্টার মিলে এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে!
তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী ভারতেরই, তাদের বিমানবাহিনীও বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। আধুনিক প্রযুক্তিও তাদের হাতে আছে, অথচ তার পরেও মাত্র ৩০০০ একর এলাকার, ২০ কিলোমিটারে ঘেরা একটা বিমানঘাঁটি রক্ষা করতে ছয়জনের বিরুদ্ধে যেভাবে তারা হিমশিম খেল, সেটা একেবারেই লজ্জাজনক।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর নিজেও কিছু কিছু ফাঁকফোকর ছিল বলে স্বীকার করেছেন— তবে তিনি যুক্তি দিয়েছেন অভিযানটা যেমন সহজ বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আসলে আদৌ ততটা সহজ ছিল না।
তিনি বলেন, তাছাড়া ওই এয়ারবাসে তখন বাইরের অন্তত ছয়টি দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাও ছিলেন, তাদের নিরাপত্তার দিকটাও আমাদের ভাবতে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, কিছু গাফিলতি আমারও নজরে এসেছে— সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করা হবে।
দিল্লির বিখ্যাত থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের’ প্রধান সাবেক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বলছেন, সবার আগে তদন্ত হওয়া উচিত নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য মেলার পরও কেন তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে এত দেরি হল।
হামলাকারীদের সবাইকে হত্যা করা সম্ভব হলেও এইসব কারণেই কিন্তু ভারত পাঠানকোট অভিযানের সাফল্য নিয়ে একেবারেই গর্বিত হতে পারছে না।
বরং এই লড়াই শেষ হওয়ার মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মাথায় উত্তরের চেয়ে অনেক বেশি প্রশ্নই এখন ভিড় করে আসছে।
০৭ জানুয়ারি ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস
�