আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মায়ের কোলে জীবিত ফিরে এলো ১১ বছর আগের ‘মৃত’ সন্তান। এ যেন সিনেমার এক চিত্রনাট্য! দীর্ঘ এগারো বছর পর বাড়ি ফিরল এক যুবক। তার নাম রেজাউল। ভারতের পশ্চমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের রেজাউল সরকার এগারো বছর আগে মুম্বই গিয়ে ম্যালেরিয়ায় মারা যান বলে পরিবারের কাছে খবর আসে। কুমারগঞ্জের ককোটি গ্রামে বাড়ি রেজাউলের বাবা মা এমনকি আত্মীয়স্বজন ও সকলেই সেই সময় খোঁজখবর নিয়ে বিশ্বাস করেন যে তার মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয় ওই সময় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তার পরলৌকিক ক্রিয়াকর্মও পরিবারের লোকেরা সম্পন্ন করেন। কিন্তু গতকাল বিকেলে আচমকাই গ্রামে এসে হাজির হন রেজাউল। এগারো বছর মরে যাওয়া রেজাউল কে জীবিত দেখে কিছুটা হলেও হতচকিত হয়ে যান পরিবার ও গ্রামের মানুষজন।
কুমারগঞ্জের ককোটি গ্রামের বছর ছাব্বিশের যুবক রেজাউল সরকার। রেজাউল পনের বছর বয়সে হামিদুল মন্ডল নামের এক আত্মীয়র সাথে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিল। অভিযোগ সেখানে যাওয়ার পর রেজাউলকে অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দেয় হামিদুল। ওই সময় হামিদুল নিজেই কুমারগঞ্জে রেজাউলের বাড়িতে টেলিফোন করে খবর দেন যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয় ওই সময় পরিবারের লোকেদের কাছে মৃত্যু ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট-এর জেরক্স কপিও পাঠিয়েছিল হামিদুল। সেই সার্টিফিকেট ও নিকটাত্মীয় হামিদুলের কথা বিশ্বাস করে রেজাউলের বাবা মা তার মৃত্যু হয়েছে এই বিশ্বাস করে আত্মার শান্তি কামনায় পরলৌকিক কাজকর্মও সেরে ফেলেন। দীর্ঘ এগারো বছর ধরে হামিদুলের বাবা ও প্রতিবেশীরা তার মৃত্যু হয়েছে এই বিশ্বাস নিয়ে থাকলেও মা রেলিফা বিবি কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি যে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রেজাউলকে ফিরতে দেখে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রেজাউল জানিয়েছে মুম্বাইয়ের ওরসি এলাকায় নিয়ে গিয়ে তার আত্মীয় হামিদুল তাকে এক ব্যক্তির কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। ওই ব্যক্তি তাকে মহারাষ্ট্রই কোনো এক খনি এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমিকের কাজ করাতো। সেখান থেকে আগে বহুবার পালিয়ে আসার চেষ্ঠা করেছিল সে। কিন্তু প্রতিবারই নিরাপত্তা রক্ষীর হাতে ধরা পরে যেত এরপর চলত অত্যাচার। এবার সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে আসতে পেরেছে বলেও রেজাউল জানিয়েছে। সে এতদিন ভাবতেও পারেনি যে কোনদিন আবার সে বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসতে পারবে। শুধু তাই নয় রেজাউল আরও জানিয়েছেন যে বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর তাকে খনি এলাকায় নিয়ে গিয়ে মাটির নিচে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ এগারো বছর সে সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি। দীর্ঘ কয়েক বছর পর বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসতে পেরে তার খুবই আনন্দ হচ্ছে বলেও রেজাউল এদিন জানিয়েছেন।
রেজাউলের মা রেলিফা বিবি জানিয়েছেন ওই সময় ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে সকলে তা বিশ্বাস করলেও তিনি তা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। ছেলের পরলৌকিক কাজকর্ম সারলেও তার বিশ্বাস ছিল যে রেজাউল ফিরে আসবেই। ছেলে কে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়ে তিনি খুবই খুশি।
বাবা মকবুল সরকার জানিয়েছেন রেজাউল মুম্বাই যাওয়ার মাস কয়েক পর হামিদুল টেলিফোনে জানায় যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে। এবং মহারাষ্ট্রেই তার দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথমে তারা বিশ্বাস করেননি যে এটা হতে পারে। এর পর হামিদুল ডেথ সার্টিফিকেটের একটি জেরক্স কপিও পাঠিয়ে ছিল। যা দেখার পর তিনি মেনে নিয়েছিলেন যে রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পরবর্তী কাজকর্ম করা হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামেরই লোকজন ছুটে এসে তাকে প্রথম খবর দেন যে রেজাউল বেঁচে আছে এবং ফিরে এসেছে। রেজাউল তার পরিবারের ও আত্মীয়স্বজন সকলকেই চিনতে পেরেছে ও তাদের নামও হুবহু বলতে পেরেছে। বাবা মকবুল সরকার আরও জানিয়েছেন যে রেজাউলের কাছ থেকে তার উপর চলা অত্যাচার ও তাকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটি বিস্তারিত শুনে তবেই হামিদুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করবেন তিনি। এব্যাপারে তারা হামিদুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও তা করতে পারেননি বলেও তিনি জানিয়েছেন। - কলকাতা২৪
০৭ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস