মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১, ১০:২৩:২৭

ইসরায়েলিরা আতঙ্কিত আল-কাসসাম ব্রিগেডের কারণে!

  ইসরায়েলিরা  আতঙ্কিত আল-কাসসাম ব্রিগেডের কারণে!

২০১৪ সালের পর এ বছর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে হামাস। সেই সঙ্গে আরও হামলার হুমকি দিয়েছে তারা। হামাসের রয়েছে শক্তিশালী সেনা সংগঠন। আর এর মূলে রয়েছে যে ব্রিগেড তার নাম ‘আল-কাসসাম’। মূলত ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে পুরোভাবেই থাকে তারা। কী এই ‘আল-কাসসাম’ ব্রিগেড। মূলত ১৯৯০ সালের আগে হামাসের সামরিক শাখা সবার কাছে অপরিচিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে বছরে এ সামরিক শাখার কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। ফিলিস্তিনের শহর ইয়া’বাদে ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের গুলিতে নিহত সিরিয়ান মুক্তি আন্দোলনের নেতা ‘এজ্জেদিন-আল-কাসসাম’ এর নাম অনুসারে এ সামরিক শাখার নাম দেওয়া হয় ‘আল-কাসসাম’ ব্রিগেড। আল-কাসসাম ব্রিগেডেন আগে এবং হামাস প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই ভিন্ন নামে চলে আসছিল, যার মধ্যে রয়েছে- ‘ফিলিস্তিন মুজাহেদিন’ এবং ‘মাজদ’ এর মতো গ্রুপ। ‘আল-কাসসাম ব্রিগেড’ ১ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে তাদের প্রথম অপারেশনের ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এ ব্রিগেডের একটি অংশ দরনসশান নামের একজন ইসরায়েলি রাবাইকে (ইসরায়েলি ধর্মযাজক) হত্যা করে। এক ঘোষণার মাধ্যমে হামাস আল-কাসসাম ব্রিগেডকে তাদের মিলিটারি শাখা হিসেবে ঘোষণা করে। শুরুতে সীমিত সংখ্যক সৈন্য নিয়ে শুরু করা এ ব্রিগেড এখন গাজার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। নিজেদের ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এক বুলেটিনে তারা জানান, কেবল গাজাতেই তাদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এটি একটি সত্যিকারের সেনাদল, যেটিতে সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে কোম্পানি, ব্যাটালিয়ন এবং ব্রিগেড। বুলেটিনে জানানো হয়, নর্দার্ন গাজা ব্রিগেড, গাজা ব্রিগেড, সেন্ট্রাল গাজা ব্রিগেড এবং সাউর্দার্ন গাজা ব্রিগেড নামে আল-কাসাসামের চারটি ব্রিগেড আছে; যার মূল সৈন্য সংখ্যা অন্তত ৫০-৬০ হাজার। একটি পিস্তল নিয়ে শুরু হয় এ সামরিক শাখা, এরপর অস্ত্রাগারে যোগ হয় একটি রাইফেল এবং এরপরে নিজেদের তৈরি মেশিন গান। ধীরে ধীরে ‘হোয়াজ’ এর মতো বিস্ফোরক যন্ত্র, আত্মঘাতী হামলার জন্য বেল্ট এবং দূর থেকে হামলার জন্য বিস্ফোরক যন্ত্র যোগ হয়। ২০০১ সালের ২৬ অক্টোবর আল-কাসসাম ব্রিগেড স্থানীয়ভাবে তৈরি রকেট দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এ রকেটের নাম ছিল ‘কাসসাম-১’। এ ঘটনা উল্লেখ করে টাইমস ম্যাগাজিন ‘একটি পুরোনো রকেট যেটি মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিতে পারে’ নামে শিরোনাম করে। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবহার করা হয় ‘কাসসাম-২’। এর মধ্যে ২০১২ সালের এক যুদ্ধে তারা এম-৭৫ ব্যবহার করে। এ সময় যুদ্ধে তারা ইসরায়েলের হাইফা শহরকে লক্ষ্য করে আর-১৬৯ রকেট ব্যবহার করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর মতো আল-কাসসাম ব্রিগেডের ইঞ্জিনিয়ারিং, এরিয়াল, আর্টিলারি এবং আত্মঘাতী স্কোয়াড রয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য আল কাসসাম বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন করেছে। আল-কাসসামের মিলিটারি শাখা ‘আল-বাত্তার’, ‘আল-ইয়াসিন’ নামের কামান বিধ্বংসী গোলা তৈরি করে, যেটি ইসরাইলের সবচেয়ে শক্তিশালী মেরকাভা কামান ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়া তারা ইসরায়েলের কিছু সেনাকে আটক করতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে একজন ছিল গিলাত শালিত। ২০০৫ সালে কর্তব্য পালনরত অবস্থায় তারা তাকে আটক করে। ২০১১ সালে ১০৫০ জন বন্দি ফিলিস্তিনির বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয়। এই ব্রিগেড ২০০৮ এবং ২০১২ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসরায়েলের অনেক ক্ষতি করে। এবারের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের অভ্যন্তরে দেড় হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে হামাসের আল কাসসাম ব্রিগেড। এদিকে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের পর এবার ‘রামুন’ বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হামাস। হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের রামুন বিমানবন্দরে মধ্য পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আইয়াশ-২৫০’ এর সাহায্যে হামলা চালানো হয়েছে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে