রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৫৮:০২

স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা যখন ভিখারি

স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা যখন ভিখারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ওরা ভিখারি বিন্তু সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।  থমকে গেলেন? হ্যাঁ, সত্যিই এমন ঘটনা।  তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।  সহমর্মিতার এমন উদাহরণ খুব একটা শোনা যায় না যে৷ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার একদল তরুণ-তরুণী ভিক্ষা চাচ্ছেন বর্ধমান শহরের পথে পথে৷

কেউ নাক সিঁটকালেও পরে টাকা চাওয়ার কারণ কানে আসতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকে৷ সাবেক এক সহপাঠীর জীবন বাঁচাতে মরিয়া এ তরুণ-তরুণীরা সাহায্য চাচ্ছেন সবার কাছে৷

ওরা সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী৷ নানা পেশায় এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন অনেকে৷ কিন্ত্ত পুরনো সহপাঠীর সঙ্কট তাদের ফের কাছে টেনেছে৷ দিনমজুর পরিবারের সন্তান সেই সহপাঠীটিরও গত নভেম্বরে গবেষণার কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল৷ কিন্ত্ত ক্যান্সার তার জীবনের সব স্বপ্নকে শেষ করে দিতে চলেছে৷

বন্ধুমহল সহপাঠীর এমন দুঃসময়ে শুধু নিজেদের পকেট থেকে কিছু অর্থ সাহায্য করেই দূরে সরে যাননি, বন্ধুর চিকিত্‍সার খরচ তুলতে পথে পথে ভিক্ষা শুরু করেছেন৷

সহপাঠীর নাম আশিস ধারা৷ ভুগোলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ৷ আশিসের বন্ধু দেবব্রত বিশ্বাসের দৃঢ় সংকল্প। তিনি বলেন, আমাদের এ যুদ্ধে জয় করতেই হবে৷ প্রয়োজনে আমরা রাজ্যেজুড়ে সাহায্য তুলব৷ আমরা হারবো না৷  

না হারার এ শপথে দেবাশিসের পাশে রয়েছেন জয়তী, সুমনা, সুস্মিতা, অরিত্ররা৷

আশিস যে এখন মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন, সেটাও এ বন্ধুদেরই সৌজন্যে৷ নিজেদের ভাঁড়ার ফাঁকা করে সংগ্রহ করেছিলেন ৭০ হাজার টাকা৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অধ্যাপকদের কাছে চেয়েচিন্তে জোগাড় করেছিলেন আরো ৮০ হাজার টাকা৷

সেই দেড় লাখ টাকায় আশিসকে মুম্বাইয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তারা৷ কিন্ত্ত ক্যান্সারের চিকিত্‍সার খরচ ক্রমে বেড়েই চলেছে৷ প্রাথমিকভাবে সাত লাখ টাকা খরচের হিসাব দিয়েছে মুম্বাইয়ের বেসরকারি হাসপাতালটি৷

সেই টাকা সংগ্রহ করতেই এখন প্রতিদিন বর্ধমানের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে আশিসের সহপাঠীদের৷ কখনো আদালত চত্বরে ফ্লেক্সে আবেদন লিখে সাহায্য চাচ্ছেন, কখনো তাদের দেখা যাচ্ছে রাস্তার পাশের দোকানে বা পথচলতি মানুষের কাছে হাত পাততে৷

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এ প্রয়াস দেখে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন অনেকেই৷ রোজ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ হচ্ছে পথেই৷ আশিসের বন্ধু জয়তী ভট্টাচার্য বলেন, আশিসকে আমরা বাঁচাবোই৷ যেদিন জানতে পেরেছিলাম যে, চিকিত্‍সায় ওর রোগ নিরাময় সম্ভব, সেদিনই আমরা কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমেছিলাম৷

আশিসের আর এক বন্ধু সুস্মিতা ঘোষ বলেন, বিন্দু থেকেই তো সিন্ধু হয়৷ আমাদের কেউ যেমন দশ টাকা দিয়েছেন, তেমন কেউ পাঁচশ' টাকাও দিয়েছেন৷

সুমনা কোনার নামে তাদের আর এক বান্ধবী বলেন, এ সমাজে এখনো ভালো মানুষের অভাব নেই৷ তাদের সাহায্য আমাদের আশিষকে সুস্থ করে আনবে৷

বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড়ের ভুতগোর পারের বাসিন্দা আশিসের পরিবার৷ স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার কিছুদিন পর হঠাত্‍ নিঃশ্বাসে কষ্ট শুরু হয়েছিল আশিসের৷

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রায় এক বছরের চিকিত্‍সায় উন্নতি না হওয়ায় তিনি কলকাতায় গিয়ে জানতে পারেন, নাকে টিউমারের জন্য শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে৷ বায়োপসিতে ধরা পড়ে আশিস ক্যান্সারে আক্রান্ত৷
১০ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে