আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ওরা ভিখারি বিন্তু সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। থমকে গেলেন? হ্যাঁ, সত্যিই এমন ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সহমর্মিতার এমন উদাহরণ খুব একটা শোনা যায় না যে৷ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার একদল তরুণ-তরুণী ভিক্ষা চাচ্ছেন বর্ধমান শহরের পথে পথে৷
কেউ নাক সিঁটকালেও পরে টাকা চাওয়ার কারণ কানে আসতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকে৷ সাবেক এক সহপাঠীর জীবন বাঁচাতে মরিয়া এ তরুণ-তরুণীরা সাহায্য চাচ্ছেন সবার কাছে৷
ওরা সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী৷ নানা পেশায় এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন অনেকে৷ কিন্ত্ত পুরনো সহপাঠীর সঙ্কট তাদের ফের কাছে টেনেছে৷ দিনমজুর পরিবারের সন্তান সেই সহপাঠীটিরও গত নভেম্বরে গবেষণার কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল৷ কিন্ত্ত ক্যান্সার তার জীবনের সব স্বপ্নকে শেষ করে দিতে চলেছে৷
বন্ধুমহল সহপাঠীর এমন দুঃসময়ে শুধু নিজেদের পকেট থেকে কিছু অর্থ সাহায্য করেই দূরে সরে যাননি, বন্ধুর চিকিত্সার খরচ তুলতে পথে পথে ভিক্ষা শুরু করেছেন৷
সহপাঠীর নাম আশিস ধারা৷ ভুগোলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ৷ আশিসের বন্ধু দেবব্রত বিশ্বাসের দৃঢ় সংকল্প। তিনি বলেন, আমাদের এ যুদ্ধে জয় করতেই হবে৷ প্রয়োজনে আমরা রাজ্যেজুড়ে সাহায্য তুলব৷ আমরা হারবো না৷
না হারার এ শপথে দেবাশিসের পাশে রয়েছেন জয়তী, সুমনা, সুস্মিতা, অরিত্ররা৷
আশিস যে এখন মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন, সেটাও এ বন্ধুদেরই সৌজন্যে৷ নিজেদের ভাঁড়ার ফাঁকা করে সংগ্রহ করেছিলেন ৭০ হাজার টাকা৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অধ্যাপকদের কাছে চেয়েচিন্তে জোগাড় করেছিলেন আরো ৮০ হাজার টাকা৷
সেই দেড় লাখ টাকায় আশিসকে মুম্বাইয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তারা৷ কিন্ত্ত ক্যান্সারের চিকিত্সার খরচ ক্রমে বেড়েই চলেছে৷ প্রাথমিকভাবে সাত লাখ টাকা খরচের হিসাব দিয়েছে মুম্বাইয়ের বেসরকারি হাসপাতালটি৷
সেই টাকা সংগ্রহ করতেই এখন প্রতিদিন বর্ধমানের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে আশিসের সহপাঠীদের৷ কখনো আদালত চত্বরে ফ্লেক্সে আবেদন লিখে সাহায্য চাচ্ছেন, কখনো তাদের দেখা যাচ্ছে রাস্তার পাশের দোকানে বা পথচলতি মানুষের কাছে হাত পাততে৷
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এ প্রয়াস দেখে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন অনেকেই৷ রোজ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ হচ্ছে পথেই৷ আশিসের বন্ধু জয়তী ভট্টাচার্য বলেন, আশিসকে আমরা বাঁচাবোই৷ যেদিন জানতে পেরেছিলাম যে, চিকিত্সায় ওর রোগ নিরাময় সম্ভব, সেদিনই আমরা কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমেছিলাম৷
আশিসের আর এক বন্ধু সুস্মিতা ঘোষ বলেন, বিন্দু থেকেই তো সিন্ধু হয়৷ আমাদের কেউ যেমন দশ টাকা দিয়েছেন, তেমন কেউ পাঁচশ' টাকাও দিয়েছেন৷
সুমনা কোনার নামে তাদের আর এক বান্ধবী বলেন, এ সমাজে এখনো ভালো মানুষের অভাব নেই৷ তাদের সাহায্য আমাদের আশিষকে সুস্থ করে আনবে৷
বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড়ের ভুতগোর পারের বাসিন্দা আশিসের পরিবার৷ স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার কিছুদিন পর হঠাত্ নিঃশ্বাসে কষ্ট শুরু হয়েছিল আশিসের৷
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রায় এক বছরের চিকিত্সায় উন্নতি না হওয়ায় তিনি কলকাতায় গিয়ে জানতে পারেন, নাকে টিউমারের জন্য শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে৷ বায়োপসিতে ধরা পড়ে আশিস ক্যান্সারে আক্রান্ত৷
১০ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম