শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১, ০৯:৪২:১৮

দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যাতাকলে পড়ে নিজ দেশেই শরণার্থী

দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যাতাকলে পড়ে নিজ দেশেই শরণার্থী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চরম দারিদ্রের মধ্যে পরিবারের সবাই নিজ দেশের শরণার্থী ক্যাম্পে থাকছেন। এটা সত্যি খুব বেদনাদায়ক অনুভূতি। তবে লেবাননে এমন ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে কয়েক বছর ধরে ভঙ্গুর অর্থনীতি ও নাজুক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। 

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ৫০ বছরের বেশি আগে লেবাননে ফিলিস্তিনিদের জন্য 'শাতিলা শরণার্থী ক্যাম্প' নির্মাণ করা হয়। বিদেশি শরণার্থীদের জন্য নির্মিত এই ক্যাম্পে এখন লেবাননের নাগরিকরা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। খবরে বলা হয়েছে, শরণার্থী ক্যাম্পটিতে লেবানিজরা দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। বাসাম নামে এক বৃদ্ধ ট্যাক্সি চালক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু চাকরি হারানোর পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি এই ক্যাম্পে উঠেছেন। 

তিনি বলেন, আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ভাড়া বহন করতে পরিনা। আর খাদ্য ও পানীয়ের বিষয়ে বলতে বলবেন না। নিজ দেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার দুটি উপায় ছিল। রাস্তায় বসবাস করা অথবা এখানে আসা। আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছি। তবে এই শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসের থেকে রাস্তায় বসবাস করা ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

লেবাননে চরম সংকট বিরাজ করছে। দেশটির মুদ্রার মানে ব্যাপক ধস নেমেছে। এর জন্য দেশটির নাগরিকরা বছরের পর বছর দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন। শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া বাসাম নামের ওই ব্যক্তি বলেন, আমরা কাকে দোষ দিব? সব দোষ রাষ্ট্রের। আমাদের দেশ ধোকাবাজ এবং চোরের দলে ভরে গেছে। ক্যাম্পে বসবাস করা খুবই কষ্টের উল্লেখ করে বাসামের স্ত্রী বলেন, লজ্জায় আমরা মরে যাই।

পৃথিবীর বুকে আয়তনে ক্ষুদ্র একটি রাষ্ট্র লেবানন। মাত্র ১০ হাজার ৪৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি দেশ। ক্ষুদ্র হলেও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় দেশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে নানা আগ্রাসন, বাইরের হস্তক্ষেপ ও দেড় দশকের গৃহযুদ্ধ অন্তত সেটাই প্রমাণ করে। দেশটির একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর বৈরুত। ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে থাকা ২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণে বন্দরটি একেবারেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এ পর্যন্ত দেড় শ মানুষ মৃত্যুবরণ করার খবর পাওয়া গেছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটি। এমনিতেই পশ্চিম এশিয়ার এ দেশ (লেবানন) দীর্ঘদিন বিদেশি আগ্রাসন আর গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত। দেড় দশক ধরে অভ্যন্তরীণ সামাজিক ও রাজনৈতিক চুক্তির আওতায় গণতন্ত্রের মোড়কে গঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা কিছুটা স্থিতিশীলতা পেলেও দেশটির অর্থনীতি ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। 

অর্থনৈতিক অব্যবস্থা, দুর্নীতি ও দুঃশাসনে সেখানকার জনগণের ত্রাহি অবস্থা। করোনাকাল শুরুর আগে দেশটির শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে প্রচণ্ড গণবিক্ষোভ হয়। এতে শাসকগোষ্ঠীর খুব একটা টনক নড়েছে বলে মনে হয় না। এরপর আসে করোনাকাল। করোনার ফলে লেবাননের জনগণের 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' অবস্থা হয়। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে