কেন কী কারণে এতো তাড়াতাড়ি পুরো আফগানিস্তান দখল করতে পারল তালেবানরা। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। আমেরিকানদের ধারণা ছিল তালেবানদের কাবুলে আসতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। কিন্তু সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়েছে তারা।
‘আমরা প্রশিক্ষণ দিতে পারব, অস্ত্রশস্ত্র দিতে পারব, কিন্তু যুদ্ধ করার যে ইচ্ছাশক্তি তা তো আর দিতে পারব না’—যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের এমনটিই বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও দাবি করেছেন, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো দেশে যুদ্ধ করতে পারে না, যে দেশের সেনারা নিজেরাই যুদ্ধ করতে চায় না।
গত রবিবার তালেবান যখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ঢোকা শুরু করে, তখনো দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় ১৫ দিন বাকি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো জোটের দেশগুলোতে তখন আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। যে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আনুষ্ঠানিক সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, ২০ বছর পর আবার সেই তালেবানের রাজধানীতে ফেরার সময় রীতিমতো পালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। বিশ্লেষকদের অনেকে এর সঙ্গে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়াগনের সাদৃশ্য খুঁজছেন।
তালেবান যখন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছিল, তখনই পশ্চিমা গণমাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হচ্ছিল তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান বাহিনী কেন সফল হচ্ছে না। গত দুই দিনে কাবুলের একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, মানসিকভাবে অনেক আগেই হেরে গিয়েছিল আফগান বাহিনী। কেউ কেউ আবার একে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন। তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় না থাকলেও গত দু-তিন বছরে আবারও শক্তি জানান দিচ্ছিল। প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো স্থানে হামলা হতো। রাজনৈতিক অনৈক্য, নির্বাচিত নেতৃত্ব নিয়ে জনগণের হতাশার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে তালেবান।
তালেবান কাবুলে পৌঁছার প্রাক্কালে ইনস্টিটিউট অব ওয়ার অ্যান্ড পিস স্টাডিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েত নাজাফিজাদা বলেছিলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রিত পতন বলে মনে হচ্ছে। এর একটি ইতিবাচক পরিণতি হতে পারে রাজনৈতিক সমঝোতা। আরেকটি হতে পারে দেশে যুদ্ধের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি হবে ভয়ংকর ভুল।
যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশকে আফগানিস্তানে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য ৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সেই সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র এখন তালেবানের দখলে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মার্ক কিমিট আফগান বাহিনীর পরাজয় বিশ্লেষণ করতে গিয়ে চারটি কারণকে দায়ী করেছেন। এগুলো হলো তড়িঘড়ি করে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধ-আত্মত্যাগের জন্য যৌক্তিক কারণের অভাব, ব্যাপক দুর্নীতি এবং সম্ভবত তালেবানের প্রচার-প্রচারণা।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো ‘এয়ার সাপোর্ট’ (বিমান, ড্রোন দিয়ে হামলা, উদ্ধার) দিয়েছে, এমন খুব কম প্রমাণই আছে। বরং অনেক প্রমাণ আছে যে সেনা প্রত্যাহারের পর ঠিকাদাররা আফগান বাহিনীকে এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণ থেকে রসদ সরবরাহ—সব ক্ষেত্রেই ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।