আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার ঐতিহাসিক চূড়ান্ত পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশ্ব নেতাদের অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। গতকাল (শনিবার) শেষ বেলায় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিন ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ ঘোষণা করেন যে, তেহরানের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। রেডিও তেহরানের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
ভিয়েনায় এ ঘোষণা দেয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এ কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া চূড়ান্ত সমঝোতা ইরান সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে বলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ নিশ্চিত প্রতিবেদন দেয়ার পর ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ‘পরমাণু ইস্যুতে ইরান উচ্চাভিলাষী বহুসংখ্যক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ক্রান্তিকাল পেরিয়ে আজ উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে পৌঁছাল।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও চুক্তি বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই অর্জন এটাই প্রমাণ করছে যে, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ নিরসন করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে সংলাপ এবং ধৈর্যশীল কূটনীতি। সব পক্ষের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে চমৎকার বিশ্বাসযোগ্য প্রচেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’
এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো বলেছেন, ‘ ইরান এবং আইএইএ’র সম্পর্ক এখন নতুন অধ্যায়ে পৌঁছাল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। যারা এ প্রচেষ্টাকে বাস্তবে রূপ দিতে পরিশ্রম করেছেন আমি তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।’
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেছেন, ‘ইরানের জনগণ ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সমর্থনে তেহরান এ অধিকার অর্জন করল।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বহু বছরের ধৈর্য ও দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং কঠিন কৌশলগত কাজের মাধ্যমে আজ সব প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং এখন আমরা তা বাস্তবায়ন করছি।’
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস বলেছেন, ‘শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘটনাকে কূটনীতির জন্য ঐতিহাসিক সফলতা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কূটনৈতিক এ সফলতা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য সংকট বিশেষ করে সিরিয়া যুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।’
এ বিষয়ে আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইরানের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশংসা করেছেন। তবে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। হিলারি বলেন, ’ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা লঙ্ঘন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে যার বিপরীতে আমেরিকার উচিত তেহরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।’
ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ইরান-বিরোধী বাগাড়ম্বর অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘চুক্তি করার পরও ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাতিল করে নি।’ তিনি বলেছেন, এ চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে ইসরাইল তা লক্ষ্য করবে এবং কোনো ধরনের লঙ্ঘন হলে সতর্ক করবে।
১৭ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই