রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬, ১১:০৫:২৩

বাংলাদেশের সাহায্য চায় ভারত

বাংলাদেশের সাহায্য চায় ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে শত শত কোটি ডলার খরচ করে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার যে অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে ভাটির দেশ বাংলাদেশকেও সামিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে দিল্লি। ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী বলেছেন, যেহেতু গঙ্গার প্রবাহ কলুষমুক্ত হলে বাংলাদেশও উপকৃত হবে তাই তিনি চান তারাও এই অভিযানে অংশীদার হোক এবং সেই মর্মে তিনি শীঘ্রই ঢাকাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও জানাবেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

ভারতে নদী-বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, যেহেতু পুরো নদী-অববাহিকাকে নিয়েই এই গঙ্গা-অভিযান শুরু হয়েছে তাই বাংলাদেশেরও এখানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল প্রকল্পগুলোর একটি হল ‘নমামি গঙ্গে’ – যার অধীনে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা বিপুল অর্থ খরচ করে দেশের এই প্রধান নদীকে দূষণমুক্ত করে তাতে পানির প্রবাহ বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে।

এই মিশনের মূল দায়িত্বে আছেন কেন্দ্রীয় জল সম্পদমন্ত্রী উমা ভারতী – তিনি জানিয়েছেন এই অভিযানে বাংলাদেশকেও যুক্ত করা গেলে তিনি খুশি হবেন।

উমা ভারতী বলছেন, ‘ভারত আর বাংলাদেশ উভয়কেই দারিদ্র আর বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে – আর দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কিন্তু জলসম্পদের একটা বড় ভূমিকা আছে। আমি এর পরেই যখন সুযোগ পাব তখন তাদের সঙ্গে এই প্রসঙ্গটি তুলব – যাতে গঙ্গা অভিযানে বাংলাদেশও সামিল হতে পারে।’

তিনি আরও জানান, ‘গঙ্গা যখন পদ্মা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তার আগে উজানের প্রকল্পগুলো যদি শোধরানো যায় তাহলে তো বাংলাদেশই দূষণমুক্ত জল পাবে, এতে তো তাদেরও লাভ।’

মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারত এই প্রকল্পে বাংলাদেশের কাছ থেকে কোনও আর্থিক ভূমিকা প্রত্যাশা করছে না – বরং চাইছে মিশনের বৈঠকে তাদের প্রতিনিধিরাও যোগ দিন, গঙ্গার দূষণ কমাতে ও প্রবাহ বাড়াতে তাদের মতামত দিন।

পরবর্তী যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে উমা ভারতী যখন ঢাকায় যাবেন, তখনই ঢাকাকে এ ব্যাপারে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।

কিন্তু ভাটির একটি দেশ কীভাবে উজানে সমর্থক ভূমিকা রাখতে পারে? বিশিষ্ট নদী-বিশেষজ্ঞ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রধান কল্যাণ রুদ্র বলছিলেন গঙ্গা অববাহিকায় সেটা কিন্তু মোটেই অসম্ভব নয়।

ড: রুদ্র বলছেন, গঙ্গার নিম্ন অববাহিকায় এমন বহু নদী আছে যেগুলো বাংলাদেশ থেকে আবার ভারতে ঢুকেছে। যেমন সুন্দরবনের বহু নদী, ইছামতী বা চূর্ণী।

দর্শনা চিনি মিলের বর্জ্য চূর্ণীতে পড়ে সেটিকে এমনভাবে দূষিত করছে যে ভারতে তা বিরাট সমস্যা তৈরি করছে – দুই সরকারের মধ্যে লেখালেখিতেও তার সমাধান হয়নি।

তাই একটা নদীর দূষণ কমানোর চেষ্টায় অববাহিকার সব দেশকেই যুক্ত করা গেলে তাতে অনেক সময় উভয়েই লাভবান হতে পারে বলে কল্যাণ রুদ্র মনে করছেন।

আর যেহেতু ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে পুরো নদী-অববাহিকাকে ধরেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে – তাই এখানে সংশ্লিষ্ট সব দেশেরই ভূমিকা আছে বলে কল্যাণ রুদ্রর অভিমত।

এমন কী তিনি বলছেন গঙ্গা শুধু ভারত ও বাংলাদেশেরই নয় – নেপাল ও চীনের কিছুটাও এই অববাহিকার অংশ। কাঠমান্ডুর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাগমতী নদীতেও অসম্ভব দূষণ – সেই নদীও ভারতের বিহারে ঢুকে গঙ্গায় মিশেছে।

অভিন্ন নদীর ব্যবহারে জাতিসংঘের যে আইনি নির্দেশিকা আছে তাতেও বলা হয়েছে একটা দেশ নদীতে এমন কিছু করতে পারবে না যাতে অন্য দেশে প্রভাব পড়ে, জীববৈচিত্র্য রক্ষিত হয় এমন আরও অনেক কিছু।

কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘মন্ত্রী এতশত ভেবে বাংলাদেশকে সামিল করার কথা বলেছেন কি না জানি না, তবে তার এই মন্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা অবশ্যই আছে।’

বিভিন্ন অভিন্ন নদীর উজানে ভারত কী প্রকল্প নিচ্ছে সেটা তাদের কখনওই ঠিকমতো জানানো হয় না – এটা বাংলাদেশের পুরনো অভিযোগ।

'নমামি গঙ্গে' অভিযানে ঢাকাও সামিল হলে তা হয়তো কিছুটা দূর হবে – তবে তাদের যেটা প্রধানতম উদ্বেগ, অর্থাৎ পদ্মা বা তিস্তা দিয়ে আরও বেশি পরিমাণে জল পাওয়া – এই পদক্ষেপে তার কোনও সুরাহা অবশ্য এখনই হচ্ছে না।
১৭ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে