আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 'হ্যাঁ, আমি নিজের হাতে আমার স্ত্রী জেসিকাকে খুন করেছি৷ কারণ তিন বছর আগে আমার সঙ্গে এক মহিলার সম্পর্ক ছিল৷ যা এখন নেই৷ কিন্তু সেই সম্পর্কের জেরে জেসিকা আমাকে প্রচণ্ড সন্দেহ করত৷ বলছিলেন স্বামী নীল ফনসেকা।
তিনি আরো বলেন, এই নিয়ে আমাদের দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত৷ যার প্রভাব পড়ত আমার সুখী গৃহকোণে৷ শনিবার ভোর রাতেও নিছক সন্দেহের জেরে আচমকা আমাকে ঘুম থেকে তুলে মারতে শুরু করে জেসিকা৷ আমারও মাথায় খুন চেপে যায়৷ তাই আমিও উত্তেজনার বশে স্ত্রীকে খুন করি৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার, আই লাভ জেসিকা৷ ওকে আমি খুবই ভালবাসতাম৷ কিন্তু নিছক সন্দেহ আমার পরিবারটাকে শেষ করে দিল৷ তবে ছেলেদের আমি খুন করিনি স্যার৷ খুন করেছে জেসিকাই৷
দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার এই স্বীকারোক্তিই দিলেন পাম অ্যাভিনিউ কাণ্ডের জখম 'খুনি' নীল ফনসেকা৷ দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকা পাম অ্যাভিনিউয়ের একটি বহুতলের বিশালাকার তিনতলার ফ্ল্যাট ফনসেকা পরিবারের৷
ইন্টিরিয়র ডেকোরেশনের পৈতৃক ব্যবসা দেখাশোনা করেন নীল৷ শেক্সপিয়র সরণিতে রয়েছে বিশাল অফিস৷ নিজে ইন্টিরিয়র ডেকোরেটর হওয়ায় পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটের ডেকোরেশনও নিজেই করেছিলেন নীল৷ পুরো ফ্ল্যাটেই রয়েছে সেন্ট্রাল এসির ব্যবস্থা৷ সেই কারণেই ঘরের দরজা জানলা থাকলেও ঘরটি 'এয়ার টাইট'৷
তাই নীলের ঘরে ভোর রাতের চিৎকার-চেঁচামেচি এবং নজিরবিহীন খুনের ঘটনা বিন্দুমাত্র টের পাননি পাশের ঘরে থাকা মা শার্লি, মেয়ে সামান্থা ও শ্যালিকা শাবানা৷ এদিন দুপুরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কলকাতার লালবাজারের গোয়েন্দা কর্তাদের ঘটনার লিখিত বয়ান দেন নীল৷
কারণ তারও গলায় ও হাতে রয়েছে গভীর ক্ষত৷ কথা বলা সম্পূর্ন বারণ চিকিৎসকদের৷ তাই তিনপাতার লেখায় নীল এদিন জানান, 'বড়দিন ও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে ২৫ ডিসেম্বরের আগে আমেরিকা থেকে কলকাতায় আসে আমার আদরের মেয়ে সামান্থা৷ কয়েকদিন পর তার ফিরে যাওয়ার কথা৷ তাই শুক্রবার আমরা সপরিবার ডালহৌসি ইনস্টিটিউটে একটি রাতের পার্টিতে যাই৷ আমরা সকলেই অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সেই পার্টি উপভোগ করি৷ অংশ নিই পানীয় পানের আসরেও৷ সেই পার্টি সেরে মাঝরাতে ফ্ল্যাটে ফিরে যে যার ঘরে ঘুমোতে চলে যাই৷'
একটি ঘরে ঘুমিয়েছিলেন নীল, জেসিকা ও তাদের দুই ১৬ বছরের ছেলে ড্যারেন ও জেসুয়া৷ সেণ্ট জেভিয়ার্স ও অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চের নবম শ্রেণির কৃতী ছাত্র৷ পাশের ঘরে রাত পর্যন্ত ঠাকুমা শার্লির সঙ্গে গল্প করছিল নাতনি সামান্থা৷ এতক্ষণ ঠিকঠাকই ছিল৷
বয়ানে নীল জানান, 'ভোর প্রায় চারটে৷ আচমকা আমাকে ঘুম থেকে তুলে মারধর করতে থাকে জেসিকা৷ ওকে অনেক বোঝাবার চেষ্টা করেছি৷ শোনেনি৷ মারের চোটে আমি জখম হই৷ ততক্ষণে দেখি পাশে শুয়ে থাকা দুই ছেলের রক্তাক্ত মৃতদেহ৷ এর পরই আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি৷ ডাম্বেল দিয়ে জেসিকার মাথায় আঘাত করে খুন করি৷'
১৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি