সোমবার, ২০ জুন, ২০২২, ০২:০৩:৩৯

এই দম্পতির পরিকল্পনা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশকে

এই দম্পতির পরিকল্পনা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এই দম্পতির পরিকল্পনা রীতিমতো টনক নাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশকে। রূপায়ণ গুপ্ত ২০১৬ সালে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার দায়ে জেল খেটেছেন এক বছর। তাতে কী! জেল থেকে বেরনোর পর এবার সঙ্গী তার স্ত্রী মধুশ্রী চৌধুরী।

স্ত্রীকে নিয়ে ফের প্রতারণার জাল বুনেছে রূপায়ণ। শুধু বদলে গিয়েছে সংস্থার নাম। ‘স্কাইলার্ক’ ট্রাভেলস নাম নিয়ে সংস্থা খুলে ২০১৬ সালে একাধিক ব্যক্তির থেকে টাকা তুলেছিল বিদেশ ট্যুর করানোর নামে। টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিলে রূপায়ণ ও তার দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। 

যদিও পরে জামিনে ছাড়া পায় রূপায়ণ। এবার সফরনামা লেইজর নামে নতুন সংস্থা খুলে ফের প্রতারণার কারবার খুলেছে রূপায়ণ। সঙ্গী স্ত্রী মধুশ্রী চৌধুরী। ওয়েবসাইটে সংস্থার ঠিকানা জ্বলজ্বল করছে ৭৩, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, কলকাতা। মাস খানেক এই সংস্থার নামে একাধিক পরিবারকে ট্যুর করিয়েছে রূপায়ণ ও মধুশ্রী। 

এমন কী, তাদের সংস্থার ব্যবস্থাপনায় যারা ঘুরতে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই পরিষেবায় সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আর সেই বিশ্বাসকেই হাতিয়ার করেছে রূপায়ণ ও মধুশ্রী। সুদূর কাতারে বসে এদের প্রতারণার শিকার রাহুল সেন নামে এক প্রবাসী বাঙালি। 

তার বক্তব্য, পরিবারের সদস্যরা কাতার থেকে কলকাতায় এসে হিমাচল ঘুরতে যাবেন বলে পরিকল্পনা করেন। সেই মোতাবেক রূপায়ণদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাহুল। কাতার থেকে কলকাতা হয়ে হিমাচল ঘুরে ফের কাতার ফেরা, এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয় রূপায়ণকে।

রাহুল সেনের দাবি, এই ট্যুর বাবদ দেড় লক্ষ টাকা খরচের কথা বলা হয়। তাতে রাজি হয়ে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা ও পার্সপোর্টের ফটোকপি পাঠিয়ে দেন রূপায়ণকে। এই পর্যন্ত সবই ঠিক। কলকাতায় আসার সময় এগিয়ে আসছে দেখে রূপায়ণকে ফোন করতেই রাহুল সেন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন।

অভিযোগ, যোগাযোগ করা যায়নি। রূপায়ণ ও তার স্ত্রী মধুশ্রীর ফোন বন্ধ ছিল। এমন কি, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের যে ঠিকানায় সংস্থার অফিস, সেখানে লোক পাঠিয়ে ওই ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ। সুদূর কাতার থেকেই ইমেল মারফত কলকাতার গল্ফগ্রিন থানায় প্রতারণার অভিযোগ করেছেন রাহুল সেন। একই সঙ্গে অভিযোগ জানিয়েছেন লালবাজারেও।

একই অভিজ্ঞতা শ্যামবাজারের গৌরব দাসেরও। তারা চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রূপায়ণের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অক্টোবর মাসে শিলং ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। তাদের ট্যুর বাবদ ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা খরচের কথা বলেছিল রূপায়ণ। অগ্রিম বাবদ ৭০ হাজার টাকা দেন গৌরব। কিন্তু এপ্রিল মাসে হঠাৎ তার ঠাকুমা অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

চিকিৎসকরা এই ট্যুর আপাতত স্থগিত রাখতে বলেন। এরপর রূপায়ণের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয় জানান বলে দাবি গৌরবের। এমন কি, মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিল রূপায়ণ, দাবি করেন গৌরব। মে মাসের ৭ তারিখ ফোন করে জানতে চান টাকা ১০ তারিখ ফেরত দেওয়া হচ্ছে কি না। 

মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে গৌরবকে জানিয়েছিল রূপায়ণ কিন্তু ১১ মে থেকে আর রূপায়ণের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি গৌরব। তিনিও কলকাতা পুলিশের গল্ফগ্রিন থানা ও লালবাজারে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। 

অবশেষে একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। অফিসার দশরথ সিং-এর নেতৃত্বেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের ধরেছে পুলিশ। অসংখ্য মানুষকে ঠকিয়ে তাদের থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে এই দম্পতি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে