আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রথমে প্রেমের ফাঁদ। পরে বিয়ে। তারপর ভাল বেতনে চাকরি। আর কি চাই একজন কিশোরীর। কিন্তু সেই চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পর জানতে পারে তারা বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর শুরু পরাধীন জীবন। এভাবেই পরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে কিশোরীদের পাচার করে আসছে একটি চক্র। এর পেছনে দু'একজন নয়, একটা প্রশিক্ষিত টিম কাজ করে। রোববার রাতে ভারতের জয়নগর থেকে এমনই একটি নারী পাচার চক্রের হোতা কাশেমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এজেন্ট ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরও মূলত বিয়ে ও চাকরি টোপ ব্যবহারেরই প্রশিক্ষণ দিত কাশেম। সেই এজেন্টরা টোপ ফেলে গরিব পরিবারের মেয়েদের বিয়ে করত। চাকরি দেয়ার নাম করে তাদের পাচার করে দিত কাশেমের কাছে। কাশেম সেই মেয়েদের বিক্রি করে দিত অন্যান্য রাজ্যে।
সিআইডি বলছে, নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ একটি কৌশল অবলম্বন করত কাশেম। মোবাইল ফোনে কখনওই কোনও কথা বলত না। ফলে তার খোঁজ পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল সিআইডি-কে। সোর্স মারফত গোয়েন্দারা রোববারই খবর পান যে, কাশেম জয়নগরের মনিরতটের একটি বাড়িতে উঠেছে। স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে সিআইডি-র একটি দল সন্ধ্যায় হানা দেয় ওই বাড়িতে। দেখা যায়, ঘরে শুয়ে আছে কাশেম।
তা-ও হয়তো সম্ভব হতো না। গত জুলাইয়ে জয়নগর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় এক ১৪ বছরের কিশোরী। বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই কিশোরীকে দিল্লিতে পাচার করা হচ্ছে। তখন থেকেই সতর্ক ছিলেন গোয়েন্দারা। অপেক্ষার ফল মেলে অক্টোবরে। দিল্লিগামী কালকা মেল থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরীকে।
মেয়েটি জানায়, খইরুল ওরফে মুন্না নামে এক যুবকের সঙ্গে তার প্রণয়-সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাকে বিয়েও করে সেই যুবক। তার পরে ভাল চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার টোপ গিলিয়ে মেয়েটিকে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাচ্ছিল সে। সিআইডি দেখেই পালিয়ে যায় মুন্না। পরে অবশ্য তাকে ধরে ফেলে সিআইডি।
মুন্নাকে জেরা করে জানা যায়, মেয়েটিকে কাশেমের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ছক কষেছিল সে। তার আগেও সে বিয়ের টোপ দিয়ে অন্তত আটটি কিশোরীকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে কাশেমের কাছে বেচে দিয়েছে।
কাশেম ধরা পড়ার পরে জানা যায়, ব্যবসার খাতিরে তার নিজের বিয়ের সংখ্যাটাও অন্তত আট। এর বাইরে আছে তার অন্যান্য এজেন্টের বিয়ে ও মেয়ে পাচার। সংখ্যাটা মোট কত, ভেবে কূল পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, শুধু জয়নগর, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার এলাকা থেকে ১৫ জনেরও বেশি কিশোরীকে বিয়ে করে বাইরে পাচার করে দিয়েছে কাশেমের চক্র। সেই কিশোরীদের অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন নিষিদ্ধপল্লিতে আছে।
এক তদন্তকারী কর্মকতা বলেন, ‘কাশেম ওই চক্রের মূল পান্ডা। দিল্লিতে তার একটি বাড়ি আছে। এ রাজ্যের কিশোরীদের প্রথমে রাখা হতো সেখানেই। পরে (...) মিললে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। এ রাজ্যে কাশেমের বেশ কিছু এজেন্টের হদিস মিলেছে। তাদের খোঁজ চলছে।’
১৯ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস