আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রেম মানে না জাতি-কুল ও বয়স। যুদ্ধের মাঝে গোলা-বারুদে প্রেম নিখোঁজ হলেও সেই প্রেম কোনা একসময় ধরা দেয়। এমনই যুদ্ধের বারুদে নিখোঁজ প্রেম মিলল ৭০ বছর পর।
ইবেলার এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
৯৩ বছরের নরউড থমাস চললেন অস্ট্রেলিয়ায়। আসছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বিশ্বযুদ্ধের আগুনে যে প্রেম পুড়ে ছারখাড় হয়েছিল, তা-ই আবার এ বিকেলে ভোরের প্রথম ফুল হয়ে ফুটেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অস্থির এক সময়। চারিদিকে বারুদ, রক্ত, হত্যা, আগ্রাসন, জয়-পরাজয়। এরই মধ্যে সবার অলক্ষ্যে ফুটেছিল ছোট্ট একটা প্রেমের গল্প। ঠিক রূপকথার মতো।
ইংল্যান্ডে আলাপ হয়েছিল টগবগে সেনা জওয়ান নরউড থমাস এবং তরুণী জয়েস মরিসের। কিন্তু সেই দামাল সময়ের মাত্র দু’মাস পরই প্যারাট্রুপার নরউডকে চলে যেতে হয় অন্যত্র।
এরপর পৃথিবীর আর্থসামাজিক ভিত্তিটাই পাল্টে গেছে। অক্ষশক্তি থেকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন, পুঁজিবাদ থেকে শুরু করে একাধিক ‘ইজম’— সময় এগিয়েছে তরতর করে। কিন্তু সেই বারুদের পোড়া গন্ধে হারিয়ে যাওয়া দুটো মাসকে পুঁজি করে এতদিন অপেক্ষা করেছেন নরউড এবং জয়েস।
জীবনের উপান্তে এসে ফের মিলিত হবেন তারা। এর পেছনে রয়েছে আর একটা রূপকথা।
আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিচের বাসিন্দা নরউডের প্রেমের গল্প মাস দুয়েক আগে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে লোকমুখে। বৃদ্ধ, অসুস্থ নরউডকে তার প্রেমিকার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে তোড়জোড় শুরু করেন এলাকাবাসীই। সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় খোঁজ পাওয়া যায় জয়েসের। স্কাইপি-তে যোগাযোগ করানো হয় দু’জনের।
৭০ বছর পর কথা হলো ঘণ্টা দুয়েক। দু’জনে দু’জনকে কথা দিলেন, ‘দেখা হবে।’ কিন্তু কীভাবে? নরউডের কাছে অত টাকা নেই যে, তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
এলাকাবাসী বললেন, ‘কুছ পরোয়া নেহি। এ জন্য চাঁদা উঠাতে শুরু করল। এখনো পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার ডলারের বেশি জোগাড় হয়ে গেছে। পুরো ঘটনা জানানো হয় এয়ার নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে। তারা জানিয়ে দেন, যাতায়াতের ভাড়়াটা তাদের তরফে উপহার।
নরউড এখন বুঝি গাইছেন, ‘অল মাই ব্যাগস আর প্যাকড, আই অ্যাম রেডি টু গো...’। তবে এ গান আর বিচ্ছেদের নয়। জেট প্লেন তাকে নিয়ে যাবে সেখানে, যেখান থেকে একদিন একটি উড়োজাহাজই উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল অন্যত্র।
নরউড নামবেন সেখানে, যেখানে থমকে রয়েছে সময়। থমকে রয়েছে দু’হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রেম। সেই দুটো মাস...আর একটা ভ্যালেন্টাইন্স ডে...।
২২জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম