আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভেবেছিলেন, সীমানা পেরিয়ে এই ছোট শিশুটিকে নিয়ে পৌঁছে যাবেন নিরাপদ দেশে। কিন্তু উদ্ধারকানী দল আর ডুবন্ত নৌকারটির মধ্যে ছিল ৫ মিটারের বেশি ব্যবধান, যা লঙ্ঘন করা সম্ভব ছিলনা। আর একটু এগোলেই সীমান্ত। তুরস্কের সীমানা পেরিয়ে আসতে চলেছে সেই নৌকাটি। আর এ নৌকার মধ্যে যারা ছিলেন, সেই মুহূর্তে তাদের সবার একটাই পরিচয়। তারা শরণার্থী।
একদিনে রয়েছে নিজের দেশ ছেড়ে আসার বেদনা। অপরদিকে নতুন একটি দেশে আসার পর সে দেশে তারা কতটা জমি পাবেন, সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করে আসছে তাদের। ঈজিয়ান সাগরে গ্রিসের লেসবস দ্বীপের কাছাকাছি আসতেই তাদের নৌকাটি বেকায়দা হয়ে পড়ে যায়। সব আরোহীসহ ডুবতে থাকে সেই নৌকাটি। না, এই দৃশ্য নির্জনে ঘটেনি। দুর্ঘটনার খানিকটা দূরেই অপেক্ষমাণ ছিল একটি উদ্ধারকারী দল।
এ দলটি বিরাট দোটানায় পড়ে যায় এই আকস্মিক ঘটনায়। কি করবেন তারা, বুঝে ওঠার আগেই ৩১ জন শরণার্থীকে নিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি। উদ্ধারকারী দলের লিডার সাইমন লিউইস জানাচ্ছেন, তার দলের চোখের সামনেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। কিন্তু যেখানে দুর্ঘটনটি ঘটে, সেটি কার্যত তুরস্কের এলাকা। উদ্ধারের কাজে সীমানা লঙ্ঘন করবেন কি না, ভাবতে ভাবতেই ডুবে যায় নৌকাটি। আরো একটা ভয় তাদের তাড়া করছিল। আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে তারা কোনও চোরাচালানে লিপ্ত রয়েছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে— এই ভেবে তারা আর উদ্ধার কাজে এগোন নি।
ততক্ষণে বিপন্ন শরণার্থীরা বুঝে গিয়েছেন বাঁচার কোনও আশাই তাদের নেই। এমন অবস্থায় এক মা তার কোলের শিশুটিকে ছুড়ে দেন অথৈ পানিতে। তিনি ভেবেছিলেন, সীমানা পেরিয়ে শিশুটি পৌঁছক নিরাপদ দেশে। কিন্তু উদ্ধারকারী দল আর ডুবন্ত নৌকাটির মধ্যে ৫ মিটারের বেশি ব্যবধান, যাকে লঙ্ঘন করা যাবে না। কারণ, এমন কাজ আন্তর্জাতিক আইন অনুমোদন করে না।
লিউইসের কাছে ট্রমা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুর্ঘটনা। চোখ বুজলেই শুনতে পাচ্ছেন বিপন্ন শরণার্থীদের আর্তনাদ। সেই মায়ের চোখ ভেসে উঠছে বার বার। ভেসে উঠছে ছুড়ে দেওয়া শিশুটির সলিল সমাধির দৃশ্য। আর বার বার নিজ থেকেই কেঁপে উঠছেন। চটকা ভেঙে দেখছেন ঈজিয়ান ফুঁসছে তার নীল আর ফসফরাস নিয়ে। নৌকাটি যেন মুহর্তের মধ্যেই হারিয়ে গেল পনিত তলায়। যে চোখের সামনে পানি আর পানি, একাধারে অদৃশ্য ও হাস্যকর আন্তর্জাতিক সীমানা।
২৬ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই