আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আরো একটি নিষ্ঠুর কাহিনীর সাক্ষী হল বিশ্ববাসী। বলা হয়, নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে বেশি ভালো বাসেন মা। কিন্তু এখানে এমন এক আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থী মায়ের করুণ কাহিনীর কথা উঠে এসেছে মায়ে যা আপনার হৃদয় ছুয়ে যাবে।
তুরস্ক থেকে সাগর পথে সীমানা পার হচ্ছিল একদল শরণার্থী। একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তারা পাড়ি জমিয়েছিল অচেনা পথে, ভিন দেশে। মাতৃভূমি ছেড়ে আসার বেদনা সাথে যোগ হয়েছিল জীবেনর শঙ্কা। ঈজিয়ান সাগরে গ্রিসের লেসবস দ্বীপের কাছাকাছি আসতেই তাঁদের নৌযানটি বেকায়দা হয়ে পড়ে। আরোহী সমেত ডুবতে থাকে সেই নৌকা।
দুর্ঘটনাস্থলের খানিকটা দূরেই অপেক্ষমাণ ছিল একটি উদ্ধারকারী দল। এই আকস্মিক ঘটনায় তারা কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়েন। কী করবেন তাঁরা, বুঝে ওঠতে পারছিলেন না।
এরইমধ্যে ৩১ জন শরণার্থীকে নিয়ে ডুবে যায় জলযানটি। উদ্ধারকারী দলের নেতা সাইমন লিউইস জানান, তাঁর দলের চোখের সামনেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। কিন্তু যেখানে দুর্ঘটনটি ঘটে, সেটি কার্যত তুরস্কের এলাকা। উদ্ধারের কাজে সীমানা লঙ্ঘন করবেন কি না, ভাবতে ভাবতেই ডুবে যায় নৌকাটি। আরও একটা ভয় তাঁদের তাড়া করছিল। আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে তাঁরা কোনও চোরাচালানে লিপ্ত রয়েছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে— এই ভেবে বিড়ম্বিত থাকেন।
ততক্ষণে বিপন্ন শরণার্থীরা বুঝে গেছেন বাঁচার কোনও আশাই তাঁদের নেই। এমন অবস্থায় এক মা তাঁর শিশুটিকে ছুড়ে দেন পানিতে। তিনি ভেবেছিলেন, সীমানা পেরিয়ে শিশুটি পৌঁছাক নিরাপদ ‘দেশ’-এ। কিন্তু উদ্ধারকারী দল আর ডুবন্ত নৌকাটির মধ্যে ৫ মিটারের বেশি ব্যবধান, যাকে লঙ্ঘন করা যাবে না। কারণ, এমন কাজ আন্তর্জাতিক আইন অনুমোদন করে না।
লিউইসের কাছে ট্রমা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুর্ঘটনা। চোখ বুজলেই শুনতে পাচ্ছেন বিপন্ন শরণার্থীদের আর্তি। সেই মায়ের চোখ ভেসে উঠছে বার বার। ভেসে উঠছে ছুড়ে দেওয়া শিশুটির সলিল সমাধির দৃশ্য। কেঁপে উঠছেন। চটকা ভেঙে দেখছেন ঈজিয়ান ফুঁসছে তার নীল আর ফসফরাস নিয়ে। নৌকাটি নেই। পড়ে রয়েছে জল আর একাধারে অদৃশ্য ও হাস্যকর আন্তর্জাতিক সীমান্ত।
২৭ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস