বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:২৬:৩৪

যে আতঙ্কে রাজ্জাককে ৫৩২৯ কোটি টাকা ‘উপহার’ দিয়েছিল সৌদি রাজা

যে আতঙ্কে রাজ্জাককে ৫৩২৯ কোটি টাকা ‘উপহার’ দিয়েছিল সৌদি রাজা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০১৩ সালে নির্বাচনে আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাককে ৬৮১ মিলিয়ন ডলার (৫৩২৯ কোটি টাকা) অর্থ অনুদান দিয়েছিল সৌদি রাজপরিবার। যা ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত।


কিন্তু কেন? এর নেপথ্য কারণ কি? ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে আন্তর্জতাকি গণমাধ্যমে। এত বিপুল অর্থ দিয়েছিল তার কারণ জানা গেছে।


মূলত সে সময় মধ্যপ্রাচ্যে উদীয়দমান রাজনৈতিক শক্তি মুসলিম ব্রাদারহুডের আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল সৌদি আরবকে।


মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অ্যাপান্ডি আলি জানান, ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিকে ঘিরে তিনটি তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ঘুষ বা অন্য কোনো ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য পাইনি আমরা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে যে অর্থ পাওয়া গিয়েছিল, তা সৌদি রাজপরিবারের দেওয়া অনুদান।


সৌদি রাজপরিবার ৬৮১ মিলিয়ন ডলার (৫৩২৯ কোটি টাকা) অর্থ অনুদান দিয়েছিল উল্লেখ করে মোহাম্মদ অ্যাপান্ডি আলি আরও জানান, এ অর্থ ব্যবহার না হওয়ায় এর মধ্যে ৬২০ মিলিয়ন ডলার (৪,৮৫২ কোটি টাকা) ফেরতও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলারের (৬৩৪ কোটি টাকা) কি হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি অ্যাটর্নি জেনারেল।


নাজিবকে দেয়া সৌদির গোপন অনুদান ৫ মে’র নির্বাচনের অব্যাবহিত পূর্বে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যকার সময়ে কয়েক দফায় ই-ট্রান্সফারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।


সৌদি সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, অর্থ অনুদানের বিষয়টি সৌদি আরবের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত হয়। প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজের ব্যক্তিগত অর্থ ও রাজফান্ড থেকে নাজিবকে এ অর্থ দেওয়া হয়।


সৌদি বাদশাহর এক ছেলে প্রিন্স তুর্কি বিন আব্দুল্লাহর মালয়েশিয়ায় বেশকিছু ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। মূলত তিনিই এই লেনদেনে কলকাঠি নাড়েন বলে সূত্র জানিয়েছে।


সৌদির অর্থ অনুদানের উদ্দেশ্য ছিল নাজিব ও তার জোটকে নির্বাচনে জয়ী করানো, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি কৌশলগত যোগাযোগ স্থাপন করা, সারাওক প্রদেশের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অর্থায়ন করা।


কিন্তু প্রশ্ন হলো আরবের বাহিরে সৌদি থেকে প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার দূরের একটি দেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কেন?


এর উত্তরে সূত্র জানান, মুসলিম ব্রাদারহুডের ক্রমশ বর্ধনশীল প্রভাব সৌদিকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে সৌদি আরব সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে।


ইতিমধ্যেই মিশরে ক্ষমতাসীন মোহাম্মদ মুরসির মুসলিম ব্রাদারহুড গোটা আরব জুড়েই তাদের একটি গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল যা সৌদি রাজপরিবারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়।


মুরসি সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ৩ মাস পূর্বে সৌদি নিশ্চিত হয় মালয়েশিয়ার বিরোধী জোট ব্রাদারহুড ও কাতারের সমর্থনপুষ্ট।


মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরপরই সৌদি আরব তড়িঘড়ি করে মিশরের সেনা সরকারের প্রতি সমর্থন জানায় এবং তাদেরকে কয়েক বিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রদান করে।


এছাড়াও ব্রাদারহুড ইস্যুতে অন্যদের সমর্থন আদায়ের জন্য সৌদি জর্ডানকে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক সুবিধা প্রদান করে। সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরো এক বিলিয়ন ডলার জমা রাখে এবং মরক্কোকে তেল, অর্থ, বিনিয়োগ এবং চাকরি সুবিধা প্রদান করে।


এদিকে সৌদি আরব নাজিবের সাথে গোপন যে লেনদেন করেছে তার ধরণটি সন্দেহজনক। নজিব অর্থ নেয়ার মাত্র ৪ মাসের মাথায় প্রায় ৯১% বা ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ আবুধাবির আইনে পরিচালিত সিঙ্গাপুরস্থ সুইস ব্যাংকের শাখায় জমা দিয়ে দেন।


বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আসলে অস্পষ্ট। সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া তাদের মধ্যকার লেনদেনের তথ্য প্রকাশ না করা পর্যন্ত ব্যাপারটি পরিস্কার হবে না। সূত্র: বিবিসি
২৭ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে