এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : হিন্দু-মুসিলম দাঙ্গার কথাই সবার জানা। সেই সঙ্গে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলা ও মামলার ঘটনা তো প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। এত সব খারাপ খবরের মধ্যেও কিছু ঘটনা মানুষকে মানুষ বলে ভাবতে সাহায্য করে।
সবাইকে অবাক করার মতো একটি ঘটেছে। এমন ঘটনা তো হামেশাই ঘটে না। তাই যখন এমন কোনও ঘটনা এদেশের মাটিতে ঘটে তখন সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কুর্নিশ না জানিয়ে থাকা যায় না। সম্প্রতি মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শনের সাক্ষী থাকল দিল্লি শহর। যে শহরকে ইদানিংকালে নৃশংস, নিষ্ঠুর বলেই চিনতে শিখেছে আম জনতা, সেই শহরের এক বাসিন্দা ফের একবার প্রমাণ করলেন মনুষ্যত্ব ও মানবিকতাই সব কিছুর ঊর্ধে।
দুই হিন্দু অনাথ ভাই-বোনের অভিভাবকত্বের জন্যে দিল্লি হাই কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন কমার্শিয়াল পাইলট মহম্মদ শাহনাওয়াজ জাহির। হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্টের ভিত্তিতে দুই যমজ ভাইবোন আয়ুষ এবং প্রার্থনার দেখভালের জন্যে আবেদন করেন শাহনাওয়াজ জাহির।
আদালতকে তিনি জানান, এক বছরের ব্যবধানে আয়ুষ এবং প্রার্থনার বাবা (পাইলট) এবং মা (এয়ার হোস্টেস) মারা যান। ২০১২ সাল থেকে পরিবারের ড্রাইভারই দেখাশোনা করছিলেন এই দুই ভাইবোনের। কিন্তু একদিন হঠাত্ করেই বাচ্চাদের থেকে একটি ফোন পান জাহির। তারা জানায় আত্মীয় স্বজনরা খুবই খারাপ ব্যবহার করছে তাদের সঙ্গে। বাচ্চাদের কষ্টের কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারেননি শাহনাওয়াজ জাহির।
তিনি দিল্লি হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানান, যাতে বাচ্চাদের দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি এও জানান, আয়ুষ এবং প্রার্থনার বাবা এবং তাঁর বন্ধু প্রয়াত প্রবীন দয়াল মৃত্যু শয্যায় জাহিরকে অনুরোধ করেছিলেন, যাতে তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন পরম বন্ধু।
প্রবীন দয়ালের ভাইও রেকর্ড করা জবানিতে জানিয়েছেন, তিনিও নিশ্চিত তাঁর ভাইপো ভাইঝির যথাযথ খেয়াল রাখতে পারবেন শাহনাওয়াজ জাহির। আদালত যদি বাচ্চাদের দেখভালের দায়িত্ব জাহিরের হাতে তুলে দেয় তাহলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
জাহিরের এই পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। তাঁর এই কাজকে পুণ্যের বলেছে দিল্লি হাইকোর্ট। বিচারক নাজমি ওয়াজিরি বাচ্চাদের নামে এরটি ট্রাস্টও বানিয়েছেন। ইন্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলট অ্যাসোসিয়েশন এবং পরিবারের শুভাকাঙ্খীরা ১ কোটি টাকার বেশি দান করেছেন এই ট্রাস্টে। প্রবীন দয়াল এবং তাঁর স্ত্রীর সব সম্পত্তিও থাকবে এই ট্রাস্টের কাছেই।
সাংবাদিকরা ওয়াজির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে শাহনাওয়াজ জানান, তাঁর পরিবারের সঙ্গে ভালোই মিলেমিশে গিয়েছে আয়ুষ এবং প্রার্থনা। তারা নতুন পাসপোর্টও পাবে যাতে জাহির ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দুই ভাইবোনও সর্বত্র যেতে পারে। তিনি আরও জানান, আয়ুষ এবং প্রার্থনাকে হিন্দু ধর্ম মতেই বড় করবেন তিনি।
এই সময় জানিয়েছে, তাদের ধর্মান্তরিত করার কোনও ইচ্ছাই তাঁর নেই। আয়ুষ এবং প্রার্থনা যাতে নিয়মিত মন্দিরে যেতে পারে এবং হিন্দু ধর্ম ও শাস্ত্র সম্পর্কে যাতে তাদের জ্ঞান বাড়ে, তাই আদালত দয়াল পরিবারের এক পড়শিকে দায়িত্ব দিয়েছে। এই দায়িত্ব হাসিমুখেই স্বীকার করে নিয়েছেন অরুণ সাইনি।
আয়ুষ এবং প্রার্থনার ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত ট্রাস্টের কাছেই জমা থাকবে সব অর্থ এবং সম্পত্তি। দত্তক নেওয়ার ঘটনা আগে ঘটলেও শুধুমাত্র অভিভাবক হওয়ার জন্যে এমন আর্জি আগে কখনও আসেনি আদালতের কাছে। বড় হয়ে আয়ুষ বাবার মতোই পাইলট হতে চায়, অন্যদিকে প্রার্থনার একান্ত ইচ্ছে ডিজাইনার হওয়ার।
২৮ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস