আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রয়াত মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে তাজমহলের আদলে একটি সমাধি তৈরি করেছেন ভারতের এক ব্যক্তি তার। এক একর জমির ওপর আট হাজার বর্গফুটের মার্বেলের সমাধিটি তৈরি হয়েছে দেশটির তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুভারুরে। জেলানি বিবির প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে আমরুদিন শেখ দাউদ (৪৯) এটি তৈরি করেছেন। ২০২০ সালে জেলানি বিবির হার্ট অ্যাটাক হয়।
এরপর হাসপাতালে দুই সপ্তাহ কাটানোর পর তিনি মারা যান। পেশায় চাল ব্যবসায়ী দাউদ জানান, তিনি ১৭ শতকের বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার মায়ের জন্য মুঘলদের আদলে সমাধি তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
দাউদ রাজস্থান থেকে ১০০ টন মার্বেল এনেছিলেন এবং সমাধিটি নির্মাণে ৫০ মিলিয়ন রুপি খরচ করেছেন। তার তৈরি রেপলিকাটি ১.২ মিটার প্ল্যাটফর্মে ১২ মিটার লম্বা, যার চারটি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ১৪ মিটার।
সমাধিটির প্রস্থ প্রায় ৩৩ মিটার। অন্যদিকে ঐতিহাসিক সমাধিটি এর পাঁচগুণ বড়। দাউদ বলেন, ‘আমি মাকে খুব ভালবাসতাম। হঠাৎ যখন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল, আমি তাকে কবরস্থানে রেখে আসতে চাইনি। আমার ভাই ও আমি তার জন্য একটি সমাধি তৈরি করার এবং তার প্রতি আমাদের ভালবাসা ও স্নেহ প্রকাশ করার স্বপ্ন দেখেছিলাম।’
জেলানি বিবি তার স্বামী শেখ দাউদকে হারিয়েছিলেন ৩৬ বছর বয়সে। তিনি তার ছয় সন্তান—চার মেয়ে, দাউদ ও পালিত ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল খাদারকে একা বড় করেছেন। দাউদ বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৮৯ সালে মারা যান। আমার মা আমাদের একা বড় করেছেন।
আমাদের বড় করার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছেন। মা আবার বিয়ে করেননি। আমাদের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেছেন।’
মায়ের মৃত্যুর পর দাউদ প্রকৌশলী ও স্থপতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং উত্তর প্রদেশের আগ্রায় আইকনিক সমাধি তাজমহলের অনুরূপ একটি নকশা নির্বাচন করেন। তাজমহলটি মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের স্মরণে তৈরি করেছিলেন।
দাউদ বলেন, ‘আমি সাদা মার্বেল ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। কারণ আমার মায়ের সাদা হৃদয় ছিল। তার হৃদয়ে কোনো অন্ধকার ছিল না। তিনি আমাদের দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতে, অভাবীদের খাবার দিতে শিখিয়েছেন। তিনি আমাদের জীবনে আন্তরিক, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও আত্মবিশ্বাসী হতে শিখিয়েছেন।’
২০২১ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই শতাধিক শ্রমিক এর নির্মাণে জড়িত ছিল, যাদের অর্ধেক রাজস্থানের অভিবাসী। এটি গত মাসে সম্পন্ন হয় এবং ২ জুন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সমাধিটি তিনটি ভাগে বিভক্ত-জেলানি বিবির সমাধি, মসজিদ এবং মাদরাসা।
দাউদ বলেন, ‘মায়েরা সব মানুষের জন্য মূল্যবান। আমি সবাইকে বলতে চাই, সবাই মা-বাবাকে ভালবাসুন এবং সম্মান করুন। এই সমাধির মাধ্যমে আমি সবাইকে মার প্রতি সদয় হতে, তাকে ভালবাসতে এবং তার প্রতি করুণা করতে শেখাতে চাই।’ সূত্র : দ্য ন্যাশনাল নিউজ