আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বছর তিনেক আগে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে কোমায় চলে যান জিয়াং লি নামে চীনের এক ব্যক্তি। এরপর থেকেই তার সেবা-শুশ্রুষার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেন স্ত্রী ডিং। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে অবশেষে সুস্থ হয়ে উঠছেন লি। তবে চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে একসময় মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছিল ডিংকে। এখন স্বামী সুস্থ হয়ে ওঠায় সাহায্যকারীদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের (এসসিএমপি) খবরে জানা যায়, এ দম্পতির বাড়ি চীনের পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংসু প্রদেশে। ২০২০ সালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন জিয়াং লি। এতে পুরোপুরি কোমায় চলে যান তিনি। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, লি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম।
কিন্তু এরপরও একদিনের জন্য স্বামীর সঙ্গত্যাগ করেননি স্ত্রী ডিং। লির সেবাযত্নের সব ভার নিজহাতে তুলে নেন তিনি। ডিং প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর স্বামীকে ঘুরিয়ে শুইয়ে দিতেন এবং পিঠ ম্যাসাজ করে দিতেন, যেন মাংসপেশীর ক্ষয় না হয়।
স্বামীর সেবাযত্নে ডিং এতটাই ব্যস্ত থাকতেন যে, তার কাছে ঘুমানোটা হয়ে উঠেছিল বিলাসিতা। কিন্তু তার সেই কষ্টের ফল অবশেষে মিলতে শুরু করেছে। ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছেন লি। এরই মধ্যে হাঁটা, কথা বলা, এমনকি নিজে নিজে দাঁত ব্রাশ করাও শিখে গেছেন তিনি।
এসসিএমপির শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জিয়াং লি বিছানার ওপর বসে রয়েছেন এবং স্ত্রী লি তাকে খাবার মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া লিকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে সাহায্য করা, একসঙ্গে রান্না করা, ব্যায়াম শেখানো, মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ধুইয়ে দিতেও দেখা যায় ডিংকে।
তাদের এমন ভালোবাসা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে মানুষের। ডিং বলেছেন, স্বামী কোমা থেকে উঠে আসায় তিনি খুবই খুশি। তবে এর জন্য যে চিকিৎসার দরকার ছিল, তা করাতে গিয়ে প্রায় ২০ লাখ ইউয়ান (প্রায় তিন কোটি টাকা) খরচ করতে হয় ডিংকে। এর মধ্যে ছিল তার সঞ্চয়, পরিবারের সাহায্য ও চার হাজারের বেশি মানুষের দেওয়া অনুদান।
৩২ বছর বয়সী এ নারী স্বামীর চিকিৎসায় একটি ফান্ডরেইজিং ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন। তাতে সাড়া দেন ৪ হাজার ৫৫ জন। তাদের কাছ থেকে ২৬ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি (অন্তত ২৮ লাখ টাকা) অর্থসহায়তা পান এ দম্পতি।
ডিং জানিয়েছেন, প্রতিটি অনুদানের তথ্য লিখে রেখেছেন তিনি। দাতারা শুধু অর্থ দিয়েই নয়, তাকে ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়ে মনোবল শক্ত রাখতেও সাহায্য করেছেন।
এ ধরনেরই একটি বার্তায় লেখা ছিল, ‘আপনার শক্ত হৃদয় একটি বড় হাসি নিয়ে আসবে। হাল ছাড়বেন না।’ আরেকজন লিখেছিলেন, ‘আশা করি, তিনি শিগগির জেগে উঠবেন।’
বিপৎকালে পাশ দাঁড়ানোয় দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ডিংয়ের। তবে তাদের দেওয়া অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ডিং বলেন, আমি সবাইকে বলতে চাই, আমাদের পরিবারের অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। আশা করি, আমরা আগে যে অবস্থায় ছিলাম, সেরকম সমস্যায় থাকা মানুষের কাছে এই অর্থগুলো যাবে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর মানসিক অবস্থা ভালো নয়। যে অবস্থা চলছে তা তিনি এখনো মেনে নিতে পারছেন না। এই অর্থগুলো ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে তার মনে হতে পারে, তিনি সমাজের জন্য কিছু করছেন।
ডিং বর্তমানে তাদের দৈনন্দিন জীবনের খুটিনাটি ঘটনাগুলো ভিডিও করে তা অনলাইনে শেয়ার করেন। তার বিশ্বাস, এগুলো তাদের মতো পরিস্থিতিতে থাকা অন্য মানুষদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।