রবিবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৩, ০৯:৫৫:০৩

ইমরানকে কে উপহার দিয়েছিলেন ২০০ কোটি রুপির বিলাসবহুল ঘড়ি?

ইমরানকে কে উপহার দিয়েছিলেন ২০০ কোটি রুপির বিলাসবহুল ঘড়ি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হীরক খচিত বিশ্বের অতি বিলাসবহুল হাতঘড়ির ব্রান্ড গ্রাফের একটি ঘড়ি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উপহার দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

হীরায় খচিত বিশ্বের অতি বিলাসবহুল হাতঘড়ির ব্রান্ড গ্রাফের একটি ঘড়ি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উপহার দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। গ্রাফের এই ঘড়ির মূল্য ২০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি। 

সৌদি যুবরাজের কাছ থেকে পাওয়া উপহারের এই ঘড়ি ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবির বান্ধবী ফারাহ গোগি ও শেহজাদ আকবরের মাধ্যমে দুবাইয়ের ব্যবসায়ী উমর ফারুক জাহুরের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

নরওয়েজীয় বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি মিলিওনেয়ার জহুর দাবি করেন, তিনি ফারাহ গোগির কাছ থেকে ৭৫ লাখ আমিরাতি দিরহাম (বাংলাদেশি ২২০ কোটি টাকার বেশি) দিয়ে বিরল ওই ঘড়ি ও তোশাখানার আরও তিনটি উপহার কিনেছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার সামগ্রী কিনে নেওয়ার প্রমাণ তার কাছে আছে বলে দাবি করেন। বুশরা বিবির বান্ধবী ফারাহ গোগি ফারহাত শাহজাদী নামেও পরিচিত।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিলাসবহুল ঘড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার প্রমাণ দেখিয়েছেন জহুর। একই সাথে তোশাখানার উপহার তার মালিকানাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত বছরের ১৫ নভেম্বর জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ব্যবসায়ীর জহুর অভিযোগ করে বলেন, পরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছিল এবং শাহজাদ আকবরের নির্দেশে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের ভুয়া মামলা দায়ের করে। তার সাবেক স্ত্রী সোফিয়া মির্জার নির্দেশ শুনতে অস্বীকার করার পর এই মামলা হয়।

এক হলফনামায় জহুর বলেন, আমি উমর ফারুক বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের ডিস্ট্রিক্ট ওয়ানের মুহাম্মদ বিন রশিদ সিটিতে বসবাস করছি। ফারহাত শাহজাদীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল শেহজাদ আকবরের মাধ্যমে। পরে ফারহাত শাহজাদীর কাছ থেকে হীরক খচিত ঘড়ি ও অন্য তিনটি তোশাখানার উপহার সামগ্রী কিনেছি। দুটি পাসপোর্টের বিপরীতে ৭৫ লাখ আমিরাতি দিরহাম নগদ প্রদান করে এসব উপহার কিনে নিয়েছেন বলে হলফনামায় জানান এই ব্যবসায়ী।

হলফনামায় তিনি ফারাহ গোগির কাছ থেকে কেনা চারটি উপহারের তালিকা করেন; যা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দিয়েছিলেন।

লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রদূত জহুর বলেছেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের তৎকালীন জবাবদিহিতাবিষয়ক মন্ত্রী শেহজাদ আকবর তাকে গোগির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে দুবাই সফরের সময় তার সাথে সাক্ষাৎ এবং বিরল উপহার সামগ্রী দেখানোর কথা বলেন শেহজাদ। দুবাইয়ে সাক্ষাতের পর গোগি উপহার সামগ্রীগুলো বিক্রি করতে চান বলে জহুরকে জানান।

তিনি বলেন, গোগির সাথে সাক্ষাৎ এবং উপহার সামগ্রী দেখার পর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এগুলো কিনে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলেন। কারণ এসব উপহার সামগ্রী বিরল এবং অমূল্য।

‘গোগি একেবারে খোলামেলা কথা বলেছিলেন। তিনি আমাকে উপহারগুলোর ইতিহাস জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, সৌদি যুবরাজ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে এসব দিয়েছেন। তিনি ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বেগমের পক্ষে এগুলো বিক্রি করতে চান। তিনি আমাকে জানান, আকবর তাকে দুবাইয়ে আমার সাথে দেখা করতে বলেছিলেন।’

‘পণ্যগুলো খাঁটি কি না তা যাচাই করার পর আমি দামের বিষয়ে আলোচনা করিনি। এই উপহারগুলো অমূল্য হওয়ায় তিনি যা চেয়েছিলেন আমি তাকে তাই পরিশোধ করেছি। অর্থ দেওয়ার সাথে সাথে গোগি বিষয়টি টেলিফোনে আকবরকে জানান, চুক্তিটি হয়ে গেছে এবং তাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আকবর তোশাখানা উপহার কেনার জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানান এবং অনুরোধ করেন, আমি যেন এই বিষয়ে কারও সাথে কথা না বলি। আমি তার এই শর্তে রাজি হয়ে যাই।’

জহুর বলেন, আকবর আমার সাথে আবার যোগাযোগ করেন। এ সময় আমার (জহুর) সাবেক স্ত্রী সোফিয়া মির্জার পক্ষে কথা বলেন এবং তাকে তাদের দুই মেয়েকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে বলেন। এর আগে পর্যন্ত উপহার সামগ্রী কেনার বিষয়টি নিয়ে কোনও কথা ফাঁস হয়নি।

জহুর ও সোফিয়া গত ১৪ বছর ধরে তাদের যমজ কন্যাদের হেফাজত নিয়ে আদালতে লড়ছেন। আকবর জহুরকে তার মেয়েদের পাকিস্তানে পাঠানোর এবং সোফিয়ার সাথে তার বিরোধ মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। এর ব্যতিক্রম হলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকিও দেন।

ব্যবসায়ী জহুর বলেন, ‘ব্ল্যাকমেইল করতে ব্যর্থ হয়ে আকবর আমার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের প্রচার শুরু করে। তিনি এফআইএকে ব্যবহার করে মানি লন্ডারিংয়ের ভুয়া মামলা দায়ের করেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল এই দামি ঘড়িটি কেনা। কারণ আমাকে একজন ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদসহ সরকারি সব সংস্থাকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের প্রচার শুরু হয়েছিল। এমনকি আমাকে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনে রেড নোটিশ জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলেরও অপব্যবহার করা হয়েছিল।’

জহুরের মতে, ইমরান খানের মন্ত্রিসভার কাছে আকবর মিথ্যা বলেছেন এবং তার সাবেক স্ত্রী সোফিয়ার সাথে যোগসাজশ করে তার বিরুদ্ধে ভুয়া ফৌজদারি মামলা দায়েরের অনুমতি নিয়েছিলেন।

হীরায় খচিত বিশ্বের অতি বিলাসবহুল হাতঘড়ির ব্রান্ড গ্রাফের একটি ঘড়ি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উপহার দিয়েছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবি পাকিস্তান সরকারের তোশাখানা থেকে ১৪২ মিলিয়ন রুপির ১১২টি উপহার সামগ্রী মাত্র ৪০ মিলিয়নেরও কম রুপি দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন। পরে তারা উচ্চমূল্যে এসব উপহার অন্যদের কাছে বিক্রি করেন। যদিও ফারাহ গোগির উপহার সামগ্রী বিক্রির সাথে ইমরান খানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পিটিআই।

পিটিআইয়ের একটি সূত্র বলেছে, গোগি এই চুক্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেননি। অন্যদিকে শেহজাদ আকবর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে টুইট করেছিলেন।

শেহজাদ আকবর বলেছেন, জহুরের সঙ্গে তার কখনো দেখা বা কথা হয়নি। তিনি বলেন, জহুর ইসলামাবাদের সচিবালয় থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও আইনে বলা আছে, কোনও ব্যক্তি দেশে না থাকলে তিনি অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, জহুর ‘এফআইএর ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সরকার তার মামলা বাতিল করেছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে