আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শিশুদের তো কত রকমেরই স্বপ্ন থাকে। কেউ বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কেউ হবে ইঞ্জিনিয়ার। এমন আরও কত স্বপ্নের জাল বুনে শিশু মস্তিস্ক। কিন্তু এসবের ধারে কাছেও ছিল না অস্ট্রেলিয়ার সাত বছরের শিশু দেয়ান উদানি।
সিডনির কোয়াকার্স হিল পাবলিক স্কুলের ছাত্র সে। এই শিশুটির স্বপ্ন ছিল একেবারেই অন্যরকম। সে স্বপ্ন দেখত, ‘অঙ্গ দাতা’ হবেন। নিজের অঙ্গ দিয়ে সে অন্যের জীবন বাঁচাবেন। এমন স্বপ্নই দেখতেন এই শিশুটি।
দেয়ান উদানি তার স্কুলের বন্ধুদের থেকেই প্রথম জানতে পেরেছিলেন যে, মৃত্যুর পরেও মানুষের শরীরের একাধিক অঙ্গ সচল থাকে বেশ কিছুক্ষণের জন্য। আর সে অঙ্গ অন্যের দেহে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাঁচানো যায় মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জীবনও। ব্যস, সে থেকেই তার এমন স্বপ্ন।
এরপর এই শিশুটি বাবার কাছে বায়না করত অঙ্গ দাতা হিসেবে তার নাম নথিভুক্ত করতে। ছেলের আবদার রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার উদানি দম্পতি তবে শর্ত ছিল দেয়ানের মৃত্যুর পরে।
এরমধ্যে সিডনিতে যখন গ্রীষ্মের দাবদাহ বইছে। সেই সময় নববর্ষের ছুটি কাটাতে পুত্র-কন্যা সহ ভারতে এসেছিলেন উদানি দম্পতি।
গত মাসের ২২ তারিখ তাঁদের সিডনিতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ছেলে দেয়ানের মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের ফলে তা সম্ভব হয়ে উঠে নি।
এরপর দানি দম্পতি ছেলেকে ভর্তি করান মুম্বাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে। কয়েকদিনের লড়াইয়ের পর জীবন যুদ্ধ থেমে যায় সাত বছরের দেয়ানের।
এদিকে ছেলের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তার অঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নেন সিডনির এই উদানি দম্পতি। তড়িঘড়ি সেই ব্যবস্থাও সেরে ফেলেন তারা।
এখনও পর্যন্ত রিকি পন্টিংয়ের শহরের বাসিন্দা দেয়ানই ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গ দাতা। তার দান করা হৃদপিণ্ড, দু'টি কিডনি এবং যকৃৎ দিয়ে নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন ভারতের মৃত্যু পথযাত্রী চার জন।
জানা গেছে, দেয়ানের বয়সীই একটি মেয়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার হৃদপিণ্ড। মেয়েটি হৃদরোগের সমস্যায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল।
আর কিডনি দু'টি প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে ১১ বছর ও ১৫ বছর বয়সী দু'জনের দেহে। ৩১ বছরের একজনের শরীরে কাজ করছে দেয়ানের যকৃৎ।
দেয়ানের মা মিলি উদানি কান্না জড়িত কণ্ঠে জানিয়েছেন, ‘দেয়ানের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে 'অঙ্গ দাতা' হবে। খুব ছোট বয়সেই তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল’।
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন