আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি যুদ্ধ পাল্টে দিল গোটা মধ্যপ্রাচ্য। দৃশ্যমান করে তুলল বিশ্বে শক্তিগুলোর মেরুকরণ। মার্কিন প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকেই সমহিমায় বিশ্ব দরবারে দাড়াল সাবেক শোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়া। আরব জাহানও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। শরণার্থীর ভিরে টালমাটাল অবস্থা ইউরোপসহ পশ্চিমা দুনিয়া। এর পেছনে রয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধ। তবে সেই যুদ্ধ এখন নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে কে সফল? রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা?
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন পুতিন। সেখানে তার শত্রু মিত্র স্পষ্ট। লক্ষ্যও স্পষ্ট। সে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অনেকগুলো কারণ আছে পশ্চিমাদের ।
রাশিয়ান বিমান হামলার সহায়তায় সিরিয়ায় আসাদ বাহিনী তাদের অবস্থানকে মজবুত করছে। আলেপ্পো তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। আলেপ্পোতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অভিযান শান্তি আলোচনায় প্রভাব ফেলছে।
রাশিয়ার পাশাপাশি আসাদের পক্ষে কাজ করছে হিজবুল্লাহ এবং ইরান। রাশিয়ার সামরিক সহায়তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সিরিয়া যুদ্ধে । সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অবস্থান ভালোর দিকে যাচ্ছে তা এখন স্পষ্ট।
সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার লক্ষ্য স্পষ্ট। পুতিন চায় আসাদ সরকারকে শক্তিশালী করতে এবং এটা নিশ্চিত করতে যে সিরিয়ার একটি অংশ আসাদ সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রণে আছে। এটা করার জন্য তারা তুরস্ক, উপসাগরীয় দেশগুলো এবং পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের ওপর ব্যাপকহারে বিমান হামলা চালাচ্ছে। বিমান হামলার সুফলও পেতে শুরু করেছে রাশিয়া।
অন্যদিকে সিরিয়ায় গোলক ধাঁধায় পড়েছে পশ্চিমারা। সিরিয়ায় নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পারছে না তারা। আসাদ বিরোধীদের মাঝে খুব শক্ত অবস্থানে আছে আল কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী। ফলে আসাদ বিরোধীদের সাহায্য করলে আল কায়েদার অবস্থানও শক্তিশালী হবে। যা তাদের কাম্য নয়।
পশ্চিমাদের মূল লক্ষ্য সিরিয়ায় আইএসকে দমন করা। কিন্তু তাদের মিত্র সৌদি আরব ও তুরস্কের মূল লক্ষ্য আসাদ সরকারকে উত্খাত করা। আইএস তাদের প্রধান শত্রু নয়। তাদের প্রধান শত্রু বাশার আল আসাদ।
আবার পশ্চিমারা সিরিয়ায় কুর্দিদের সাহায্য করছে। সিরিয়ায় তাদের অন্যতম মিত্র কুর্দিরা। কিন্তু তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলো চায় না কুর্দিরা কোনোভাবেই শক্তিশালী হোক। তুরস্ক কুর্দিদের হুমকি মনে করে।
সিরিয়া যুদ্ধে পশ্চিমাদের ন্যায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে হচ্ছে না পুতিনকে। সিরিয়া দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার সহায়তার ফলে একটি অংশের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে আসাদ বাহিনী । বাকি আংশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে আইএসের হাতে। আর তথাকথিত মডারেট বিদ্রোহীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল এবং ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের পর ইউরোপে স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী স্থিতিশীল অবস্থা কেটে গেছে। ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সীমান্তে রাশিয়ার আক্রমণাত্মক টহল ন্যাটোকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আস্তে আস্তে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে।
রাশিয়া তার সতর্ক সামরিক অবস্থানের জন্য ন্যাটোর সম্প্রসারণকে দায়ী করছে। আর সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে পুতিন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বুঝিয়ে দিয়েছে তাদেরকেও গুণতে হবে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করার মত সামরিক সামর্থ্য তার আছে। সিরিয়া যুদ্ধে পুতিন জানেন তার লক্ষ্য কি এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের পথেই এগোচ্ছেন তিনি।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস