আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ত্রিমুখী যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে সিরিয়া। যে কোন সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। দ্রুততার সাথে রণপ্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি আরব ও তুরস্ক। সাথে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যোগ দিত পারে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোও। এর বিপরীতে শক্তি বাড়াচ্ছে রাশিয়া ও ইরান।
ইতোমধ্যে তুরস্কে জঙ্গিবিমান মোতায়েন করছে সৌদি আরব। এরপর সৌদি আর তুরস্ক হয়তো সিরিয়ায় ‘ইসলামিক স্টেটের’ বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করবে।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সৌদি আরব তুরস্কের ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটিতে জঙ্গিবিমান পাঠাচ্ছে। সৌদি কর্মকর্তারা বিমান ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেছেন। আইএসের বিরুদ্ধে ‘কৌশল ঠিক হলে তুরস্ক ও সৌদি আরব স্থল অভিযান শুরু করতে পারে। তবে মেভলুত জানান, সৌদি আরব কতটি জঙ্গিবিমান পাঠাবে তা এখনো ঠিক হয়নি।
মিশরে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দুটি দেশ সৌদি আরব ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াদ ও আঙ্কারার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এই ঘাঁটি ব্যবহার করে সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে।
মেভলুত বলেন, প্রয়োজন মনে করলে সৌদি আরব সেনাও পাঠাতে পারে। সিরিয়ায় সন্ত্রাসবাদ দমনে সৌদি আরব দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সৌদি আরব ও তুরস্ক মনে করে সিরিয়ায় পাঁচ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানের জন্য স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন অপরিহার্য। তবে ইরান ও রাশিয়া আসাদকে টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।
তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় সৌদি সেনা ঢুকবে কিনা জানতে চাইলে মেভলুত বলেন, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে প্রয়োজন মনে করলে স্থল অভিযানে সেনা পাঠাবে রিয়াদ।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলে তুরস্কের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাথে কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠক করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে।
এদিকে ভূমধ্যসাগর অভিমুখে রাশিয়ার নৌবাহিনীর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী আরো একটি নতুন যুদ্ধজাহাজ রওয়ানা দিয়েছে। বলা হচ্ছে- জাহাজটি সিরিয়ার দিকে যাচ্ছে। রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর নৌবহরের তথ্য বিভাগ শনিবার জানিয়েছে, জেলেনি ডল বুইয়ান-এম ক্লাস রণতরীটি ভূমধ্যসাগরের স্থায়ী ঘাঁটিতে যোগ দিতে রওয়ানা দিয়েছে। যুদ্ধজাহাজ বিধ্বংসী ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে এ জাহাজে।
সৌদি আরব ও তুরস্ক যখন সিরিয়ায় স্থল অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে বলে শনিবার খবর বের হয়েছে তখন একইদিনে রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ পাঠানোর খবর বের হলো। জেলেনি ডল জাহাজের সঙ্গে মাইন-মুক্তকারী জাহাজ কভরোভেটও রয়েছে।
রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টহল জাহাজটি এই প্রথম ভূমধ্যসাগরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। রুশ বার্তা সংস্থা স্পুৎনিক জানিয়েছে, জাহাজটি কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়া উপকূলে মোতায়েন যুদ্ধজাহাজগুলো সঙ্গে যোগ দেবে।
নতুন এ জাহাজটিকে কেন ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হচ্ছে তা প্রকাশ করা হয় নি তবে ধারণা করা হচ্ছে- এতে দীর্ঘপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে এবং সামরিক অভিযানে এ জাহাজের অংশগ্রণের সম্ভাবনা নাকচ করা হচ্ছে না।
এদিকে, সিরিয়ায় সৌদি আরব ও তুরস্কের সম্ভাব্য স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, কাউকে স্থল অভিযানের হুমকি দেবেন না। সিরিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস