আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল সে দেশের শাসক কিম জং উনের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগটি করলেন জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারজুরি দারুসমান৷ খুন, অপহরণ, চরম অত্যাচার, বিনা বিচারে কারাদণ্ড, বিচারের নামে প্রহসন, দেশের নাগরিকদের বাধ্যতামূলক ভাবে অনাহারে রাখা ইত্যাদি একের পর এক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠল উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
উত্তর কোরিয়ায় বিশেষ প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কিম ও তার সহযোগীদের ওপর 'উপযুক্ত ব্যবস্থা' নেয়ার দাবি জানান দারুসমান৷ জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা প্রস্তাব করেছেন, কিম ও তার ঘনিষ্ঠদের কাছে একটি নোটিস পাঠানো হোক৷ সেখানে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদলকে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করে সেখানকার সাধারণ মানুষদের অবস্থা খতিয়ে দেখতে দেয়ার অনুমতি চাওয়া হবে৷ যদি দেখা যায় সাধারণ মানুষের প্রতি কোনো রকম অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, তবে কিম ও তার অনুগামীদের ওপর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার পুরো অধিকার থাকবে জাতিসংঘের কাছে৷
গত পাঁচ বছর ধরে মারজুকি দারুসমান পিয়ংইয়ং-এর কাছে উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের অবস্থা জানতে সেখানে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে এসেছে৷ পাঁচ বছর ধরেই সেই অনুমতি অগ্রাহ্য করে এসেছে কিম প্রশাসন৷ দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়ায় মানবতা-বিরোধী অত্যাচারের কোনো ঘটনাই ঘটেনি৷ উত্তর কোরিয়ার জনসাধারণের অবস্থা জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কাছে দারুসমান যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতে উত্তর কোরিয়া থেকে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসা বেশ কয়েক জন সাধারণ মানুষ, অপহৃত জাপানি পর্যটকদের পরিবারের সদস্য ও উত্তর কোরিয়ার রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কথাও লিপিবদ্ধ রয়েছে৷
উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যে ভাবে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদলতের আওতায় আনার এবং তাদের অপরাধ প্রমাণ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেছেন দারুসমান তা কার্যকরী করতে পারে একমাত্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পারিষদ-ই৷ কিন্তু, যখনই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পারিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য চীন সেই সম্ভাবনার বিরুদ্ধে ভেটো দিয়ে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়৷
তবে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ঘটনায় কিম জং উনের প্রতি রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছে চীনও৷ তাই, উত্তর কোরিয়াকে 'কৃতকর্মের শাস্তি পেতে' ফের আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষজ্ঞরা৷ উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উত্ক্ষেপণ করার পর পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে আমেরিকা স্টেলথ প্রযুক্তি সম্পন্ন চারটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান উত্তর ওপর দিয়ে উড়িয়ে সতর্ক করেছিল কিম প্রশাসনকে৷ স্টেলথ প্রযুক্তি সম্পন্ন এই বিমানগুলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল অত্যন্ত শক্তিশালী রাডারেও এই বিমানের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না৷ আমেরিকার এই বিমানগুলি সবই পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম৷
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই