আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যেই তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন তিনি কীভাবে, কোন পরিচয়ে ভারতে রয়েছেন তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি তার দিল্লি ছেড়ে যাওয়ার খবর চাউরের পর বিভিন্ন সূত্র তা নাকচ করে দিয়েছে।
এ সময়েই জানা গেল, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট (টিডি) দিয়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক নেতা ঢাকার একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সাধারণত কোনো দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের সেই দেশের ট্রাভেল ডকুমেন্ট (টিডি) দেওয়া হয়। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অনেক তিব্বতি শরণার্থী রয়েছেন।
তাদের অধিকাংশেরই ভারতীয় পাসপোর্টধারী না থাকলেও ট্রাভেল ডকুমেন্ট (টিডি) রয়েছে। তারা টিডি নিয়েই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে থাকেন। আগেও চীন থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামাকে টিডি দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা নিয়ে রাজনীতি ও কূটনীতি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর অনেক দেশ সফর করেছেন।
শেখ হাসিনার টিডি পাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘ভারতেই শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তার বোন শেখ রেহানাও সেখানে অবস্থান করছেন। অবশ্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেও আপাতত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন। শিগগিরই ভারতের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তার। ’
অবশ্য শেখ হাসিনার জন্য ভারত ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করেছে কি না, ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন ঢাকার একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করুন। সেখানে প্রশ্ন করে দেখুন, মুখপাত্র কী বলেন!’
ভারতের সাবেক এক কূটনীতিক বলেছেন, ‘ভারত যদি শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সত্যিই দিয়ে থাকে, আমি তাতে এতটুকুও অবাক হবো না। কারণ এই পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘ভারতে ম্যাকলিয়ডগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তারাও কিন্তু বেশির ভাগই ভারতের পাসপোর্টধারী নন। বরং এই ধরনের ট্রাভেল ডকুমেন্ট (সংক্ষেপে যেটাকে বলে টিডি) নিয়েই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন।’
ওই কূটনীতিক আরো বলেন, ‘জানি না ভারত শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেবে কি না। কিন্তু গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে গড়িয়েছে, তাতে দালাই লামার ঘটনার সঙ্গে আমি কিন্তু শেখ হাসিনার কেসের অনেক মিল পাচ্ছি। ভারতে যত দিনই থাকুক, শেখ হাসিনা হাত গুটিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবেন, এটা তো আর হতে পারে না। দালাই লামাও তাই করেছেন, রাজনীতি ও কূটনীতি চালিয়ে গেছেন এবং পৃথিবীর বহু দেশে সফর করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘একইভাবে রাজনৈতিক প্রয়োজনে, বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে শেখ হাসিনাকেও ভারতের বাইরে যেতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই বাস্তবতা অনুধাবন করে ভারত যদি তাকে টিডি বা আইসি দিয়ে থাকে, সেটাতে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।’