আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যরাতে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় উইনস্টন। ঘন্টায় ২৩০ কিলোমিটার (১৪৩ মাইল/ঘন্টা) থেকে সর্বোচ্চ ৩২৫ কিলোমিটার (২০২ মাইল/ঘন্টা) বেগে আঘাত করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ফিজিতে আঘাত হানে ক্রান্তিয় ঘূর্ণিঝড়।
এতে ৩০০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটির প্রত্যন্ত এলাকাগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে, এতে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রোববার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছিল।
কয়েক ঘন্টা ধরে চলা প্রবল ঝড়ো বাতাস ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতে ঘরবাড়ি উড়ে যায়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝড়ে নয় লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত দেশটির পানি সরবরাহ ও সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তবে শেষ মূহুর্তে ঘূর্ণিঝড়টি গতিপথ পরিবর্তন করায় রাজধানী সুভা তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা পাঁচজন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরকারি কর্মকর্তারা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফিজির প্রধান দ্বীপের উত্তর উপকূলের রাকিরাকিতে বসবাসকারী ব্যবসায়ী জে দায়াল জানান, আগের ঘূর্ণিঝড়গুলোতে এত ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। রাকিরাকিতেই ঘূর্ণিঝড়টি প্রথম আঘাত হানে। তিনি বলেন, যদি লোকজন এখন অনাহারে দিন কাটাতে শুরু করে তাহলে আমি অবাক হব না। এটা ফিজি মনে হচ্ছে না, অন্য কোনো দেশ মনে হচ্ছে।
বিদ্যুতে খুঁটি ও গাছপালা উপড়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও উদ্ধারকাজ শুরু করেছে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী। প্রবল বৃষ্টিপাতে হঠাৎ বন্যা ও ভূমিধস হতে পারে বলে আশঙ্কা বিরাজ করছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ফিজিতে ৩০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কিছু কিছু এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোরো দ্বীপে ছাদ ধসে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিকটবর্তী একটি গ্রামে ৫০টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচীর জন তুইপেলেহাকি শনিবার রাতে এক ট্যুইটে বলেছেন, “কিছু গ্রামের সব ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে খবর পেয়েছি।”
টেলিফোনসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় দেশজুড়ে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ এখনো পাওয়া যায়নি। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করার ৭৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে শনিবার সকাল থেকেই লোকজন আশ্রয় নিতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেশটিতে থাকা পর্যটকরা আবাসিক হোটেলের বলরুমে ও সম্মেলন কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আকাশপথে ক্ষয়ক্ষতি জরিপ করার জন্য প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ একটি পি-থ্রি ওরিয়ন বিমান পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস