শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৩৪:৪৫

‘বাংলাদেশি রোগী দেখব না’ ঘোষণার বিরোধিতা কলকাতার কয়েকটি বড় হাসপাতাল ও ডাক্তারদের

‘বাংলাদেশি রোগী দেখব না’ ঘোষণার বিরোধিতা কলকাতার কয়েকটি বড় হাসপাতাল ও ডাক্তারদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কয়েকটি হাসপাতাল এবং কয়েকজন চিকিৎসক 'বাংলাদেশি রোগী দেখব না' বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার বিরোধিতা করছেন কলকাতার কয়েকটি বড় হাসপাতাল ও ডাক্তারদের একটা বড় অংশ। চিকিৎসকদের ও হাসপাতালগুলোর সংগঠনও বলছে যে রোগীদের কোনও জাত, ধর্ম না দেখেই চিকিৎসা করা তাদের কর্তব্য।

পূর্ব ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন জানাচ্ছে, বাংলাদেশের রোগী আসা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। যেসব হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের ওপরে অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল, তাদের কাছে এটা বড় ধাক্কা।

তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা নয়, বাংলাদেশি রোগী আসা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় ভারতের সব হাসপাতালেই তার প্রভাব পড়ছে।

কলকাতার ও আগরতলার একটি করে হাসপাতাল ঘোষণা করেছে যে সেখানে বাংলাদেশি রোগীদের তারা চিকিৎসা করবে না। কলকাতা এবং শিলিগুড়ির দুজন চিকিৎসকও  একই ঘোষণা করেছেন।

বাংলাদেশে যে ব্যাপকভাবে তাদের কথায় 'ভারত-বিরোধিতা' চলছে, সেই প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা– এমনটাই জানা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের খবরে।

কলকাতার জে এন রায় হাসপাতালের পরিচালক শুভ্রাংশু ভক্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, "দেশ সবার ওপরে। তার ওপরে কিছুই হতে পারে না। চিকিৎসা পরিষেবা একটি মহৎ পেশা, কিন্তু দেশের সম্মান সবার ওপরে।"তিনি এও বলেন যে অন্যান্য হাসপাতালগুলিও তাদের পথেই হাঁটবে বলে তার আশা।

এই হাসপাতালটির পরিচালনার সঙ্গে কলকাতার বিজেপি নেতা ও কলকাতা পৌর নিগমের কাউন্সিলর সজল ঘোষ জড়িত আছেন বলে চিকিৎসকমহল জানাচ্ছে।

তার পরে কলকাতার ও শিলিগুড়িও দুজন চিকিৎসকও বাংলাদেশি রোগী দেখবেন না বলে সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন।

আবার ত্রিপুরার আগরতলায় আইএলএস হাসপাতালে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি রোগী আসতেন। সেখানে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দিন কয়েক আগে স্মারকলিপি পেশ করে। সেই স্মারকলিপির মূল বিষয়বস্তু হলো—ওই হাসপাতালে যেন কোনও বাংলাদেশি রোগীকে পরিষেবা না দেওয়া হয়।

আইএলএস আগরতলার প্রধান নির্বাহী অফিসার গৌতম শইকিয়া গণমাধ্যমের সামনেই ঘোষণা করেন যে তারা ওই সংগঠনটির দাবি মেনে বাংলাদেশি রোগীদের সব পরিষেবা দেওয়া বন্ধ রাখছেন।

কলকাতার একটি হাসপাতাল ও দুজন চিকিৎসকের বাংলাদেশি রোগী না দেখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন চিকিৎসকও।

“একজন চিকিৎসক হিসেবে কোনও বিশেষ দেশের বা বিশেষ ধর্মের রোগী দেখব না এটা বলা যায় না। ডাক্তার হতে গেলে যে শপথ নিতে হয়, এ ধরনের কথা তার পরিপন্থী। একজন অপরাধীও আমাদের কাছে রোগী হিসাবে এলে তার চিকিৎসা করাটাই আমাদের অন্যতম শপথ,” বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ডা. মানস গুমটা।

তার কথায়, “এটা একজন ডাক্তার হিসাবে এবং সংগঠন হিসাবে নৈতিকভাবে আমরা এটা বলতে পারি না ঠিকই, কিন্তু যে অল্প কয়েকজন ডাক্তার এরকম ঘোষণা করেছেন, তারা গভীর মানসিক যন্ত্রণা থেকেই এরকম বলেছেন বলে আমার ধারণা। বাংলাদেশে যা ঘটছে, তাতে বিচলিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে– সেই যন্ত্রণা থেকেই হয়ত কয়েকজন ডাক্তার বা হাসপাতাল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস্ অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ও কলকাতার উডল্যান্ডস হসপিটালের প্রধান নির্বাহী অফিসার রূপক বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “একজন রোগী তো রোগীই– তার তো কোনও জাত, ধর্ম থাকতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব তিনি এলে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। বাংলাদেশি রোগী দেখব না, এটা বলা যায় না।”

“ভাবাবেগ থাকতেই পারে, কিন্তু কোনও ঘটনার দায় তো বাংলাদেশের সবার ওপরে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর্যায়তেও আসেনি,” বলছিলেন মি. বড়ুয়া।

মি. রূপক বড়ুয়া বলছিলেন, “আগে প্রতিমাসে গড়ে ভারতের মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হতো ২০-২৫ হাজার। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে এক হাজার। তাও মূলত নতুন রোগী নয় – পুরনো রোগী – যাদের চেকআপ ইত্যাদি আছে, তারাই ভিসা পাচ্ছেন। তাই পুরো ভারতের হাসপাতাল শিল্পের ওপরেই বড় ধাক্কা এসেছে।”

ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল গোষ্ঠী মনিপাল হসপিটালসের পূর্বাঞ্চলীয় চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. অয়নাভ দেবগুপ্তর কথায়, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে বহু রোগী ভারতের হাসপাতালগুলোতে আসতে পারছেন না। আমাদের হাসপাতালগুলোতেও বহির্বিভাগ এবং রোগী ভর্তি কমে গেছে। কিন্তু আগে থেকে ঠিক করে রাখা কোনও অপারেশন আমাদের পিছিয়ে দিতে হয়নি।”

“তবে আমাদের যারা পুরনো রোগী, তাদের চিকিৎসায় যাতে ছেদ না পড়ে, সেজন্য আমরা টেলি-মেডিসিনের ব্যবস্থা করেছি। অনলাইন কনসাল্টেশনের সংখ্যা বাড়ছে,” জানিয়েছেন ডা. দেবগুপ্ত।

গতবছর ভারতে চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ। ভারতে যত বিদেশি নাগরিক চিকিৎসা করাতে আসেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই সর্বাধিক। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে