আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনও বক্তব্যকেই সমর্থন করে না ভারত। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
মূলত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তিনি একথা জানিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেবল একটি “একক রাজনৈতিক দল” বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলেও জানিয়েছেন বিক্রম মিশ্রি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ব্রিফিংয়ে বুধবার পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন— বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনাকে ভারত সমর্থন করে না এবং এটি (হাসিনার বক্তব্য) বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই ছোট বা তুচ্ছ বিষয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেবল একটি “একক রাজনৈতিক দল” বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং “বাংলাদেশের জনগণের” ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ভারত।
চলতি বছরের আগস্টে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিত্র শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে এরপরও হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।
এমন অবস্থায় সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সফর করেন। তার ঢাকা সফর থেকে ফেরার দু’দিন পর তিনি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন। বুধবার নয়াদিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ব্রিফে দেশটির ২১ থেকে ২২ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে বিক্রম মিশ্রি বলেন, শেখ হাসিনা তার “ব্যক্তিগত যোগাযোগের ডিভাইস” ব্যবহার করে এসব বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে চলেছেন এবং ভারত সরকার তাকে এমন কোনও প্ল্যাটফর্ম বা সুবিধা প্রদান করছে না যা তাকে ভারতের মাটি থেকে তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর সুযোগ দেয়।
তিনি দাবি করেন, অন্য দেশে হস্তক্ষেপ এড়ানোর জন্য ভারতের ঐতিহ্যবাহী যে রীতি রয়েছে, এটি তারই অংশ।
দ্য হিন্দু বলছে, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির এমন মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে প্রায় নানা ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন হাসিনা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে মিশ্রি আরও জানান, সোমবার ঢাকা সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছেন— বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক “কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল” বা একটি নির্দিষ্ট সরকারের বাইরেও আছে এবং ভারত বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয় এবং বর্তমান সরকারের সাথেও জড়িত থাকবে।
তিনি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য ও যোগাযোগের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই পক্ষ রেল যোগাযোগ, বাস সংযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ নির্মাণ করেছে। তিনি অবশ্য কমিটিকে জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা এখনও “স্থগিতই” রয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে প্রথম শীর্ষ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।