আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সেরা বক্সার এখন ইস্ত্রিওয়ালা! অবাক লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। ১৮ বছরের টগবগে এই গ্র্যাজুয়েট তরুণ। নাম রাহুল রজ্জাক। তিনি ২০১১ সালে জাতীয় সাবজুনিয়র মিটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ৩৬ কেজি বিভাগে। তাঁর তো এখন জাতীয় টিমের শিবিরে শিবা থাপা, দেবেন্দ্র সিংদের সঙ্গেই থাকার কথা।
কিন্তু রাহুল রাজ্জাক এখন ভাঙাচোরা প্রায় অন্ধকার এক কামরার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটের ঘরের সামনে জ্বলছে একটা গনগনে উনুন। তার ওপর বসানো একটা লোহার ইস্ত্রি। উনুন থেকে একবার করে ইস্ত্রিটা তুলে তা কাচা জামা কাপড়ের বুলিয়ে পাট করে তা গুছিয়ে রাখছেন তিনি।
ভারতের হাওড়ার শিবপুর পুলিশলাইনে এমন ঘরে এমন কাজে এখন কিন্তু থাকার কথা ছিল না রাহুলের। ২০১১ সালে জাতীয় সাবজুনিয়র মিটে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সে সময়েই তাঁকে দেশের অন্যতম সেরা প্রতিশ্রীতিবান বক্সার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
কিন্তু ভাগ্যের ফের। রাহুলের উঠে আসার সময়ই বক্সিং কর্তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সাসপেন্ড হয়ে গেল ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশন। সব পর্যায়ের জাতীয় বক্সিং মিট বন্ধ। তাই রাহুলের পক্ষে কোনও বয়স ভিত্তিক জাতীয় মিটে নেমে নিজেকে চেনানোর সুযোগ হয়নি।
রবিবার বিকেলে রাহুলের প্রশ্ন, ‘কবে সাসপেন্ড উঠবে, আর আমরা জাতীয় মিটে নামতে পারব বলতে পারবেন? জাতীয় মিটে পদক না পেলে জাতীয় টিমে ডাক পাব কী করে?’ ঘরে বসতে দেওয়ার জায়গা নেই বলেই ঘরের বাইরে তখন ছেলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন রাহুলের বাবা পবন ও মা গীতা।
পবন বললেন, ‘ছেলেটা যে বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হল, তখন ও নিজে তো বটেই আমরাও স্বপ্ন দেখেছিলাম ও ভারতের জার্সি গায়ে রিংয়ে নামছে৷ কিন্তু এখন দেখুন ও শুধু প্র্যাক্টিস করে, এখানে-ওখানে টুর্নামেন্টে নামে৷ সামনে কোনও লক্ষ্যই নেই৷ এ ভাবে আর কতদিন চলবে?’
শিবপুর পুলিশ লাইনের বক্সিং রিংয়েই ছোটবেলা থেকে রাহুলকে প্র্যাক্টিস করানো কোচ তপন বসুর কথায়, ‘সত্যিই এ ভাবে মোটিভেশন ধরে রাখা কঠিন। আমি নিশ্চিত, যদি জাতীয় মিট চলত তাহলে এই তিন বছরে ও আরও বেশ কয়েকটা সোনা জিতে ফেলত।’
রাহুলের বুদ্ধিদীন্ত বক্সিংয়ের প্রশংসাও তপনের গলায়, ‘যেহেতু গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলে, তাই পুষ্টির অভাবে ওর চেহারাটা বক্সারসুলভ নয়। সেটা ও জানে, তাই রিংয়ে ওর প্রতি পদক্ষেপ খুব মেপে এগোয়। সাফল্যও পায়। এই তো ক'দিন আগে এখানেই সারা বাংলা মিটে ও চ্যাম্পিয়ন্স অফ চ্যাম্পিয়ন হল।’
সামনে শুধু মরীচিকা। তাও ভেঙে না পড়ে দু'বেলা কঠোর প্র্যাক্টিস। স্থানীয় দীনবন্ধু কলেজে গ্র্যাজুয়েশন করে চাকরি পাওয়ার পথও খুলে রাখছেন রাহুল৷ আর দু'ভাইকে নিয়ে পেট চালানোর জন্য সময় পেলেই বসে যাচ্ছেন ইস্ত্রি হাতে বাবাকে সাহায্য করতে। বলা তো যায় না কখন কোন সুযোগ এসে যায়! জীবন যুদ্ধে রিংয়ের অনিশ্চয়তার জন্য এখন অন্য লড়াই রাহুলের।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস