আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক জান্তার বিমান হামলায় ২৮ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী রবিবার এই তথ্য জানিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে রাখাইনের ম্রাউক-উ টাউনশিপে একটি অস্থায়ী আটককেন্দ্রে এই হামলা চালানো হয়। এই কেন্দ্রে জান্তা সেনাদের পরিবারের সদস্যদের আটক রাখা হয়েছিল।
আরাকান আর্মি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে, ‘যারা নিহত ও আহত হয়েছে, তারা মায়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যদের পরিবার। সংঘর্ষ চলাকালে আমরা তাদের আটক করেছিলাম। আমরা তাদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই এই বিমান হামলা চালানো হলো।
গোষ্ঠীটি আরো জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯টি শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে একটি ছেলের বয়স দুই বছর। নিহতদের বাকি সবাই নারী।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা হামলাস্থলের ছবিতে দেখা যায়, মৃতদেহগুলো সাদা চাদরে ঢাকা অবস্থায় ঘাসের ওপর সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের শোকার্ত অবস্থায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এএফপি জান্তা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মায়ানমার সামরিক জান্তা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু ফ্রন্টে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছে। জান্তা সরকার নিয়মিত বেসামরিক এলাকায় বিমান ও আর্টিলারি হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত। ম্রাউক-উ টাউনশিপে এই হামলা পরিকল্পি ছিল, নাকি জান্তা জানত না যে ওই এলাকা আটককেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আরাকান আর্মি (এএ) ও মায়ানমার সামরিক বাহিনীর মধ্যে রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
গত এক বছরে এএ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছে এবং প্রায় পুরোপুরি সিট্টুয়ে শহরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। রাখাইনের এই সংঘাত মায়ানমারের রক্তক্ষয়ী বিশৃঙ্খলার একটি অংশ, যা ২০২১ সালে অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শুরু হয়। এ অভ্যুত্থান একটি ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে মায়ানমারে সৃষ্ট রক্তক্ষয়ী অরাজকতার মধ্যে রাখাইন সংঘাত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় গঠিত যুব নেতৃত্বাধীন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের পাশাপাশি সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত ও সুসজ্জিত জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও লড়াই করছে। এই সংঘাতে আরাকান আর্মি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং তারা রাখাইনের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিট্টুয়ে শহরকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) গত নভেম্বরে সতর্ক করে জানিয়েছিল, রাখাইন দুর্ভিক্ষের দিকে এগোচ্ছে। সংঘাতের ফলে বাণিজ্য ও কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে, মায়ানমারে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা আরো ১৫ লাখ বেড়েছে। সূত্র : এএফপি