মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১০:৫৬:২০

যার কাছে মসজিদের ইমামতি শিখেছেন চীনের সেই মহিলা

যার কাছে মসজিদের ইমামতি শিখেছেন চীনের সেই মহিলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গোটা বিশ্বজুড়েই সংস্কৃতি আর রীতিনীতির ভিন্নতা আছে। নানা দেশের মুসলিমদের সবার ধর্মাচরণও ঠিক একই রকমের নয়।

এই বৈচিত্র্যেরই একটা দারুণ দৃষ্টান্ত হলো চীনে শুধু মহিলাদের জন্য মসজিদ– যা সে দেশে বহু কালের।

এমনই একটি মসজিদ আছে চীনের হেনান প্রদেশের কাইফেং শহরে, ইয়েলো রিভার বা পীত নদীর অববাহিকার ঠিক মাঝখানে।  কাইফেং ছিল সং রাজবংশের প্রাচীন রাজধানী।  এক হাজার বছর আগে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম ছিল কাইফেং।  নানা ধর্মের সমাবেশ হয়েছিল এই ঐতিহ্যশালী নগরীতে।

ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম– উভয়ই কাইফেংয়ে পা রাখে সপ্তম শতাব্দীতে। ওই শহরের ওল্ড সিটির সরু গলিগুলোর মাঝে আজও আছে খ্রিষ্টানদের গীর্জা, মুসলিমদের মসজিদ, বৌদ্ধ ও দাওয়িস্টদের মন্দির।

এমন কী সেখানে চীনের হাতেগোনা কিছু ইহুদী সম্প্রদায়েরে লোকজনও আছেন, আছে তাদের উপাসনালয়ও।  তবে কাইফেংয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো শুধু নারীদের জন্য মসজিদ।  সে মসজিদের ইমামও একজন মহিলা।

শহরে পুরুষদের জন্য যে প্রধান মসজিদটি আছে, তার উল্টোদিকের গলিতেই মেয়েদের জন্য এই মসজিদ।  আশপাশে বহু খাবারের দোকানও আছে সেখানে।
মসজিদের ইমামের নাম গুয়ো জিংফাং।  তার বাবা ছিলেন পুরুষদের মসজিদের ইমাম।  তার কাছেই ইমামতি শিখেছেন তিনি।

শুধুমাত্র নারীদের জন্য কাইফেংয়ে যেসব মসজিদ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এই ‘ওয়াংজিয়া গলির মসজিদ’।  এটি তৈরি হয়েছিল প্রায় দুশ' বছর আগে, ১৮২০-এ।

ইমাম গুয়ো জিংফাং বলছিলেন, নারীদের জন্য মসজিদ চীনের একটি বৈশিষ্ট্য। তবে হেনান প্রদেশেই এ ধরনের মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

কাইফেং শহরেই যেমন মেয়েদের জন্য মসজিদ আছে মোট ষোলটি। আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় আরো প্রচুর। ইয়ুনান বা ঝেংজোউ-তেও আছে শুধু মেয়েদের জন্য আলাদা অনেক মসজিদ।

তবে চীনের যেটা একমাত্র মুসলিম প্রদেশ, সেই শিনজিয়াংয়ে কিন্তু এমন কোনো মসজিদ নেই।  তারা সেখানে সুন্নি ইসলামেরই একটি মধ্য এশিয়া-ঘেঁষা ধারা অনুসরণ করে থাকেন।

বিবিসির গবেষক মাইকেল উড বলছেন, ষোড়শ শতাব্দীতে চীনের মুসলিম সমাজের মধ্যে এই উপলব্ধিটা ক্রমশ বাড়তে থাকে তাদের ধর্মবশ্বাসকে টিঁকিয়ে রাখতে হলে মেয়েদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের মুসলিমদের মধ্যে তখন থেকেই মেয়েদের পড়াশুনো করানোর ওপরও বিশেষ জোর দেয়া হতে থাকে।

কাইফেংয়ে গুয়ো জিংফাং ও তার বন্ধুরা বলছিলেন, প্রথমে মেয়েদের কোরআন ও ধর্মশিক্ষা দেয়ার জন্য নানা স্কুল গড়ে তোলা হয়।  পরে সেগুলোই অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে পুরোদস্তুর মসজিদের রূপ নেয়।

এক মুসলিম মহিলা সেখানে বলছিলেন, আমাদের মায়েরা যখন ছোট ছিলেন তখন গরিব মুসলিম মেয়েদের পড়াশুনোর একমাত্র সুযোগ ছিল এই মসজিদগুলো।  মেয়েরাই তখন মেয়েদের দেখেছে।

‘আমি জানি মুসলিম দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই মেয়েদের জন্য আলাদা মসজিদের কোনো অনুমতি নেই।  কিন্তু আমাদের এখানে এটা একটা খুব ভালো ব্যাপার বলেই আমরা মনে করি’, যোগ করেন তিনি।

১৯৪৯ থেকে চীনে মুসলিম মেয়েদের মর্যাদা অনেক বেড়েছে।  শুধু মেয়েদের জন্য এই মসজিদগুলো সেই প্রক্রিয়ারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন কাইফেংয়ের মুসলিম নারীরা।  সূত্র : বিবিসি
২৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে