সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩২:০৮

গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য!

গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ‘বিনামূল্যের ফ্ল্যাট’ নিয়ে তদন্তের মধ্যে দেশটির ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এবার ঢাকার গুলশানের একটি বিলাসবহুল ভবনের যোগসূত্রের খবর সামনে এসেছে।

গুলশানের বিলাসবহুল ১০তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। এছাড়া সম্পত্তিটির নামকরণ করা হয়েছে টিউলিপের পরিবারের নামে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এই তথ্য জানতে পেরেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রভাবশালী এই সংবাদমাধ্যমটি।

টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য। গত বছর তার দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি দেশটির ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মূলত মন্ত্রী তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। তবে গত জানুয়ারিতে মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

ঢাকার কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার বিলাসবহুল এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ২০১৪ সালে টিউলিপের “স্থায়ী ঠিকানা” ছিল। সেসময় তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

টেলিগ্রাফ বলছে, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটির অবস্থান ঢাকার গুলশানে। ঢাকার এই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আদালতের নথি বা সংবাদ রিপোর্ট অনুসারে, এনিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চম সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল।

অবশ্য যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনও সম্পত্তি নেই। আর তাই তার নিজের ঠিকানা নয় এমন বিষয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনও নেই।

প্রায় এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে তিনি এখনও সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। মূলত টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদণ্ডবিষয়ক দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসের তদন্তের জেরে তিনি (টিউলিপ) পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি এখন ভারতে রয়েছেন। বিক্ষোভের জেরে গত আগস্টে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ওই বিক্ষোভে হাসিনা সরকারের নৃশংসতায় ১৫০০ মানুষ নিহত হন। হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ও গোপনে কারাগারে বন্দি রাখার মতো ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল।

গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামের প্লটসহ পারিবারিক অবকাশযাপনের বাগানবাড়ি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। এতথ্য সামনে আসার পর গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য জানতে পারে দ্য টেলিগ্রাফ।

একটি অফিশিয়াল নথিতে দেখা যায়, গুলশানের এই সম্পত্তিটি টিউলিপের “বর্তমান” ও “স্থায়ী” উভয় ঠিকানা হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের মে মাসে টিউলিপ লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। নথিটিতে এর তিন সপ্তাহ পরের তারিখ লেখা রয়েছে।

রাজধানীর গুলশান এলাকায় ১০ তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকটি ২০১০-এর দশকে নির্মিত হয়েছিল এবং একটি প্রচারণামূলক ভিডিও অনুসারে, এখানে রুফ টেরেস ও বারান্দাসহ দুই এবং তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট রয়েছে। ভবনটি টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তার দাদা বা সাধারণভাবে পরিবারের নামে নামকরণ করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে টিউলিপ ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। গত ডিসেম্বরে দুর্নীতির এই অভিযোগের তদন্তে যুক্ত হয় টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এরপর তদন্তের অংশ হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দেশের বড় ব্যাংকগুলোকে সিদ্দিকের সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের একটি ফ্ল্যাট ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিককে আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার উপহার দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে