আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফ রশিদ দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কুর্দিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের বেতন না দেওয়ার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় ইরাকের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট রশিদ নিজেও একজন কুর্দি। তিনি গত মাসে প্রধানমন্ত্রী সুদানি ও অর্থমন্ত্রী তাইফ সামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তবে তার উপদেষ্টা হাওরি তাওফিক এই তথ্য রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছেন।
ইরাকের সর্বোচ্চ আদালতে করা মামলায় প্রেসিডেন্ট রশিদ বেতন পরিশোধের জন্য একটি স্থায়ী আদেশ জারির দাবি জানিয়েছেন, যাতে অর্থনৈতিক বিরোধের কারণেও এটি বাধাগ্রস্ত না হয়।
বাগদাদ ও কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক রাজধানী আরবিলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক বিষয়ে মতবিরোধ চললেও সরকারের পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরাকের জনসেবা খাত দীর্ঘদিন ধরে অদক্ষতা ও দুর্নীতিতে জর্জরিত এবং প্রধানমন্ত্রী সুদানি ও প্রেসিডেন্ট রশিদের মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব রয়েছে।
জানুয়ারির বেতন পরিশোধ করা হলেও এখনো ডিসেম্বরের বেতন দেওয়া হয়নি, যা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট নেচিরভান বারজানি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সুদানিকে বেতন ও অন্যান্য আর্থিক ইস্যুতে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানালেও কুর্দিস্তানের সরকারি কর্মচারীরা বেতন পরিশোধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উপদেষ্টা তাওফিক জানান, সুলায়মানিয়াহতে চলমান বিক্ষোভের কারণে মামলাটি এত দিন গোপন রাখা হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সুলায়মানিয়াহ থেকে শত শত মানুষ রবিবার আরবিলে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে চলমান অবস্থান ধর্মঘটে ১৩ জন শিক্ষক অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন।
গত বছর ইরাকের সর্বোচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছিলেন, কুর্দিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের বেতন আঞ্চলিক প্রশাসনের মাধ্যমে নয়, সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকেই পরিশোধ করতে হবে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার কারণে অর্থ প্রদানে অনিয়ম দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইহসান আল-শেম্মারি জানান, এই মামলা রশিদ ও সুদানির মধ্যকার দ্বন্দ্বকে আরো প্রকট করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাহী কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি বড় বিভক্তির মুখোমুখি হয়েছি এবং এটি প্রকাশ্যেই ঘটছে।
এদিকে জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী সুদানি প্রেসিডেন্ট রশিদের ছেলের মালিকানাধীন ‘আইকিউ ইন্টারনেট সার্ভিসেস’ কম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে এমপি হনান আল-ফাতলাভি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রেসিডেন্ট রশিদকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আপনার ছেলের কম্পানির ওপর ধার্য করা জরিমানার অর্থ দিয়েই কুর্দিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব।’ সূত্র : এএফপি