আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং সাউথ ক্যারোলিনার পর নেভাদা ককাসেও জিতে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ আর সেই সঙ্গেই রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলে দিলেন৷ মার্কো রুবিও এবং টেড ক্রুজ, যে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখে ফেলতে পারতেন, তাদের মধ্যে কেউই ট্রাম্পের ধারেকাছে নেই৷ নিউ ইয়র্ক কোটিপতির ৪৫.৯ শতাংশের পাশে রুবিওর ২৩.৯ শতাংশ এবং ক্রুজের ২১.৪ শতাংশ খুবই অসহায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নেভাদা বরাবরই সুইং স্টেট নামে পরিচিত৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
অর্থাৎ, কোনো রাজনৈতিক দলেরই সেখানে একচ্ছত্র প্রভাব নেই৷ কিন্তু সেখানেও ট্রাম্প বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন এবং ভোটের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ভোটারদের সব অংশের সমর্থনই তিনি পেয়েছেন৷ বয়স এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাকে ভোট দিয়েছেন নেভাদার মানুষ৷
এ বারের ককাসে ভোটদানের হারও ছিল আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ লম্বা লাইন, এত বেশি ভোটদাতার উপস্থিতির জন্য প্রস্তুত না থাকায় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অব্যবস্থা, কোনো কিছুই ট্রাম্প সমর্থকদের নিরুত্সাহীত করতে পারেনি৷ তারা ভোট দিয়েছেন এবং নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়েছেন৷ মেক্সিকান অভিবাসীদের নানা অপরাধে অপরাধী বলে যিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন, তার পক্ষেই ল্যাটিন আমেরিকা থেকে আসা মানুষদের সংখ্যা গরিষ্ঠের ভোট পড়াটা কম আশ্চর্যের নয়৷ লাস ভেগাসের ট্রেজার আইল্যান্ড হোটেলে জয় উদ্যাপন করতে গিয়ে ট্রাম্প নিজেই তার সমর্থনের বিস্তৃত ভিত্তির কথা বলেছেন৷
তার ভাষায়, 'আমরা ইভাঞ্জেলিকদের মধ্যে জিতেছি৷ আমরা তরুণদের ভোটে জিতেছি এবং প্রবীণদের ভোটেও জিতেছি৷ আমরা উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে জিতেছি এবং স্বল্পশিক্ষিতদের মধ্যেও জিতেছি৷ আমরাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং আমরাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত৷' নেভাদা ককাসের ফলে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল, রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে ট্রাম্পই মনোনয়ন পেতে চলেছেন৷ এখন পর্যন্ত যে চারটি প্রাইমারি এবং ককাসের ভোট হয়েছে, তার তিনটিতেই তার জয় এসেছে৷ পরের ধাপে সবার নজর থাকবে ১ মার্চের দিকে৷ যে দিন আমেরিকার ১১টি স্টেটে একইসঙ্গে প্রাইমারি বা ককাসের ভোট রয়েছে৷
কিন্তু নেভাদা জয়ের পর সেই সুপার টিউসডে নিয়েও আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প৷ ওই দিন যে ১১টি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের লড়াই, এরই মধ্যে যেখানে যেখানে সম্প্রতি জনমত সমীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে আরকানসাস এবং টেড ক্রুজের ঘরের মাঠ টেক্সাস ছাড়া সর্বত্রই এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প৷ যেমন আলাবামা, জর্জিয়া, আলাস্কার মতো কট্টর রিপাবলিকান স্টেট, তেমনই ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকে থাকা মিনেসোটা, ম্যাসাচুসেটসও৷ অঘটন না ঘটলে তাই ট্রাম্পের দৌড় থেমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই৷ অল্প দিনের মধ্যে প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে তার এই অবশ্যম্ভাবী পছন্দ হয়ে ওঠার পিছনে মূলত দু'টি ব্যাখ্যা দিচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল৷ বিশেষ করে নেভাদার ক্ষেত্রেও যা প্রযোজ্য৷ আমেরিকার ভোটদাতাদের একটা বড় অংশ রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের নিয়ে বীতশ্রদ্ধ৷
নেভাদায় ভোটের আগে যে জনমত সমীক্ষা হয়েছিল, সেখানে অনেকেই এমন মত প্রকাশ করেন যে, তারা এ বার এমন কাউকে প্রেসিডেন্টের পদে দেখতে চান, যার প্রেক্ষাপটটা রাজনৈতিক নয়৷ রাজনীতির বাইরের কোনো ক্ষেত্র থেকে যিনি উঠে আসবেন এবং আমেরিকাকে ফের জয়ের স্বপ্ন দেখাতে পারবেন৷ ট্রাম্পের ভাবমূর্তি তার সঙ্গে মিলে গিয়েছে৷ আর দ্বিতীয় কারণ, রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে তো বটেই, দলের নথিভুক্ত সদস্যদের মধ্যেও একটা বড় অংশের মত হিলারি ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পই হতে পারেন তাদের সেরা বাজি৷ সাবেক ফার্স্ট লেডিকে পিছনে ফেলার ক্ষেত্রে রুবিও বা ক্রুজের বিশ্বাসযোগ্যতা ট্রাম্পের চেয়ে অনেক কম।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই