বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫, ০৩:১১:৫৩

স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ

স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। চলতি বছর ১৬ বার দাম সমন্বয়ের মধ্যে ১২ বারই স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। আর গত তিন বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৯৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৭৭ হাজার ৯৪০ টাকা। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচুর্যের অপর নাম স্বর্ণ। একে বলা হয়, অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়ত সে কারণেই এর মূল্য কখনও শূন্যে নামেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য।

চলতি বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী দেশের স্বর্ণের বাজার। ২৫ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৬ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস, যার মধ্যে ১২ বারই বাড়ানো হয়েছে দাম, আর কমানো হয়েছে মাত্র ৪ বার। সবশেষ দাম সমন্বয়েও স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলে সামনে দেশের বাজারে আরও বাড়বে দাম।

বাজুসের সবশেষ ৩ বছরের দাম সমন্বয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৯৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৭৭ হাজার ৯৪০ টাকা। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ সমন্বয়কৃত দাম অনুযায়ী সে সময় ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার ১৫৯ টাকায়। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯ টাকায়।

আর বছর ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ৪২ হাজার ২৫ টাকা। গত বছরের ২১ মার্চ সমন্বয়কৃত দাম অনুযায়ী সে সময় ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকায়।

স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বমুখীতায় বেচকেনা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুরঞ্জন বলেন, ‘ব্র্যান্ডের বড় বড় দোকানগুলোর বিক্রিও সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে। আর মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা তো আরও করুণ। ঊর্ধ্বমুখী এই দাম পুরো স্বর্ণ ব্যবসার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী তপন পাল বলেন, ‘উচ্চমূল্যের কারণে এবার ঈদে স্বর্ণের বেচাকেনা নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। খুব উচ্চবিত্ত যারা, তারা শখ পূরণের জন্য কেনাকাটা করছেন, তাও সামান্য। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ কমেছে বেচাকেনা।’

মূলত দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বমুখিতার প্রধান কারণ বিশ্ববাজারের চলমান অস্থিরতা। হেরিয়াস মেটালস হংকং লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ডিক পুন বলেন, ’অনিশ্চিত বাজার পরিস্থিতি, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, দুর্বল মার্কিন ডলার ও পরবর্তীতে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশার কারণে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

এদিকে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ফেডারেল রিজার্ভ দুটি সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। যা বিশ্ববাজারে স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী দামের পালে হাওয়া দিয়েছে। হেরিয়াস মেটালস জার্মানির একজন মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার জাম্পফে বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বাণিজ্য শুল্ক ও আর্থিক বাজার অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা খুঁজছেন। যা তারা স্বর্ণে খুঁজে পাচ্ছেন। এতে পরিস্থিতি এখনও ইঙ্গিত দেয় যে, স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী গতি এখনও শেষ হয়নি।

এছাড়া ১৭ মার্চ থেকে গাজায় ফের ইসরাইলি হামলার প্রভাবে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বাড়তে বলে জানিয়েছেন ক্যাপিটাল ডটকমের আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডা। তিনি বলেন, ইসরাইলের বিমান হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯ টাকায়। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৫ হাজার ৩০৩ টাকায় কেনাবেচা চলছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে