আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আসন্ন ঈদুল ফিতর বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিম দেশে একই দিনে তথা আগামী সোমবার (৩১ মার্চ) অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি অবিশ্বাস্যভাবে সৌদি আরব ও বাংলাদেশেও একই দিনে ঈদ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন, জ্যোতির্বিদ্যাগত গণনা এবং আধুনিক পর্যবেক্ষণগত তথ্যের ভিত্তিতে শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি (২০২৫ সালের) ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা নিয়ে স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফেয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো) যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, ২৯ মার্চ বিকেল ৩টা ৫৮ মিনিটে পিএসটি সময় শাওয়ালের নতুন চাঁদ (সংযোগ) ঘটবে।
চাঁদের অবস্থান, সূর্যের সঙ্গে এর কোণিক বিভাজন, সূর্যাস্তের সময় উচ্চতা এবং বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাবে। ফলে এসব দেশে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সৌদি আরবে আগামী ২৯ মার্চ চাঁদ দেখা প্রায় অসম্ভব। কারণ, মক্কায় চাঁদের বয়স সেদিন সূর্যাস্তের সময় প্রায় ৫ ঘণ্টা হবে। এর ফলে, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাবে। সেই হিসেবে সেসব দেশের মুসলমানরা ৩১ মার্চ ঈদ উদযাপন করবেন। বাংলাদেশেও ওইদিন তথা ৩১ মার্চ ঈদ হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের আকাশে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় নবচন্দ্রের বয়স হবে ২৫ ঘন্টা ১৬ মিনিট। যা কিছুটা ছোট হলেও খালি চোখেও দেখা যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান এহসানুল হক জুবায়ের বলেন, ২৯ মার্চ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় নবচন্দ্রের বয়স হবে মাত্র ১ ঘন্টা ১৬ মিনিট। এ চাঁদ খালি চোখে তো নয়ই, টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা যাবে না। পরদিন অর্থাৎ ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকার আকাশে যখন চাঁদ উঠবে তখন সেটির বয়স ২৫ ঘন্টা ১৬ মিনিট। আকারে কিছুটা ছোট হবে, তবে খালি চোখে দেখা যাবে। তাই বাংলাদেশে ২৯ রোজা এবং ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একই দিনে ঈদ উদযাপনের প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তবে, সৌদি আরব যেহেতু চাঁদ দেখতে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে, তাই দেশটির চাঁদ দেখা কমিটির পক্ষ থেকে ৩০ মার্চ ঈদের ঘোষণা আসাটাও অস্বাভাবিক নয়। এরকম হলে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ঈদুল ফিতর উদযাপনে একদিনের ব্যবধান থেকে যাবে। অর্থাৎ সৌদি আরব তখন ৩০ মার্চ ঈদ উদযাপন করবে আর অন্যান্য দেশগুলোতে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর হতে পারে।
এদিকে, মিসরের নীতি হলো সূর্যাস্তের আগে চাঁদের জন্ম হওয়া, চাঁদ দেখা শর্ত নয়; তাই মিসরে ৩০ মার্চ ঈদ হতে পারে। কিন্তু মিসরের অনেক পশ্চিমের দেশ মরক্কো ঈদ করবে বাংলাদেশের সাথে ৩১ মার্চ। তাদের ৩০ রোজা পূর্ণ হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও ৩১ মার্চ ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ বছর ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের একদিন আগে রোজা শুরু করেছিল। মালয়েশিয়া করেছিল বাংলাদেশের সাথে। কিন্তু দুটো দেশেই এবার ঈদ হতে পারে বাংলাদেশের সাথে। কারণ ২৯ মার্চ যখন জাকার্তায় সূর্যাস্ত হবে তখন নবচন্দ্রের বয়স মাত্র ২ মিনিট, এ চাঁদ কোনোভাবেই দেখা যাবে না। আর কুয়ালালামপুরে যখন সূর্যাস্ত হবে তখন চাঁদের বয়স হবে ২৫ মিনিট। তাই দেশ দুটোতে ৩১ মার্চ ঈদ হবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।