সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:২৯:০৯

‘আমি নিশ্চিত, ৪৭ জন নিহত হয়েছে এবং পাঁচটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’

‘আমি নিশ্চিত, ৪৭ জন নিহত হয়েছে এবং পাঁচটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নাইজেরিয়ার মালভূমি রাজ্যে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের হাতে প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। রেড ক্রসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলের এই রাজ্যটি ধর্মীয়ভাবে মিশ্র একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যেখানে সম্প্রদায়গত সংঘাত ও জমিসংক্রান্ত প্রাণঘাতী বিরোধ দীর্ঘদিনের সমস্যা।

রাজ্যের স্থানীয় সরকার এলাকা বাসার জিকে ও কিমাকপা গ্রামে স্থানীয় সময় রবিবার রাতে এই হামলা হয়।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগে একই রাজ্যের বোক্কোস এলাকায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা একাধিক গ্রামে হামলা চালিয়ে ৪৮ জনকে হত্যা করেছিল।
নতুন হামলাস্থল রাজ্যের রাজধানী জস শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। এএফপি বলছে, এই অঞ্চলে মুসলিম ফুলানি রাখাল ও প্রধানত খ্রিস্টান কৃষকদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ প্রায়ই সহিংসতায় পরিণত হয়, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি প্রায় নেই এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

রেড ক্রসের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ৪৭ জন নিহত হয়েছে, ২২ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং পাঁচটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এ ছাড়া জিকে গ্রামের বাসিন্দা ডরকাস জন বলেন, ‘আমরা জানতাম না তারা কারা ছিল। হঠাৎ আমাদের গ্রামে ঢুকে যেদিকে পেরেছে, সেদিকেই গুলি করতে শুরু করে। তারা আটজনকে হত্যা করেছে।’

অন্যদিকে কিমাকপার জন আদামু জানান, তার গ্রামে হামলাকারীরা ৩৯ জনকে হত্যা করেছে। সোমবার পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য বা হামলাকারীদের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দেননি।

যদিও নাইজেরিয়ার নানা জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত পাশাপাশি বসবাস করে। তবু মালভূমি রাজ্যে সম্প্রদায়ভিত্তিক সহিংসতা প্রায়ই ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকরা বলেন, এই সংঘাতের পেছনের কারণগুলো জটিল।

আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমির পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চারণপথগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

জমি দখল, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব, স্থানীয় ‘মূল বাসিন্দা’ ও বহিরাগতদের মধ্যে বৈরিতা, পাশাপাশি কট্টরপন্থী মুসলিম ও খ্রিস্টান প্রচারকদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব—এসব কারণ গত কয়েক দশকে বিভাজন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন সহিংসতা শুরু হয়, তখন দুর্বল পুলিশি ব্যবস্থার কারণে পাল্টা হামলার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

রাজ্যের তথ্য ও যোগাযোগ কমিশনার জয়েস র‌্যামনাপ বলেন, ‘এই ধারাবাহিক হামলা রাজ্যের শান্তিকামী মানুষের জীবন ও জীবিকাকে অস্তিত্বের হুমকির মুখে ফেলছে।’

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুকে আহ্বান জানিয়েছে, তিনি যেন একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতা খতিয়ে দেখেন’।

সংস্থাটির নাইজেরিয়া পরিচালক ইসা সানুসি এএফপিকে বলেন, ‘এই রক্তপাত এখনই থামাতে হবে এবং সন্দেহভাজন অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে