আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের একেবারে নাকের ডগায় লকিয়ে ছিল চীনের একটি বিশাল যুদ্ধজাহাজ। অথচ টেরই পায়নি ভারত। যে এলাকায় এই ঘটনা সেই অঞ্চল নিয়ে নতুন করে বিরোধ দেয়া দিয়েছে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে।
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে কিছু দিন আগেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল চীন। এ নিয়ে সম্পর্কে তিক্ততার মধ্যেই সেখানে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে ঘি ঢালল দেশটির।
ভারতীয় নৌ-বাহিনীর কোস্টাল রেডারে লাল বিন্দু দেখা দিতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে। ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়া জলযানটি যে আদতে চীনা রণতরী, তা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আন্দামান নিকোবর কম্যান্ডে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। সদাসতর্ক আন্দামান নিকোবর কম্যান্ড অবশ্য দিল্লির জরুরি বার্তা পাওয়ার আগেই কড়া নজরদারির আওতায় এনে ফেলেছিল চীনা জাহাজটিকে।
মঙ্গলবার আন্দামান সাগরে চীনের যুদ্ধজাহাজ ঢুকে পড়ার ঘটনাকে মোটেই ছোট করে দেখছে না ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি’র যে যুদ্ধজাহাজটিকে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের খুব কাছে মঙ্গলবার দেখা গিয়েছে, সেটি একটি সাবমেরিন টেন্ডার।
জলের তলা দিয়ে গোপনে হানা দেওয়া সাবমেরিনকে সাহায্য করতে এবং সাবমেরিনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতে এই ধরণের রণতরী ব্যবহৃত হয়। আন্দামান সাগরে চীনের সাবমেরিন টেন্ডারকে ভাসতে দেখার অর্থ তা হলে কী? চীনা নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ কি সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আশেপাশে? সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না নৌবাহিনীর অফিসাররা।
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরে। এই দ্বীপগুলির আশপাশ দিয়ে অনেক দেশের জাহাজই যাতায়াত করে। পণ্যবাহী জাহাজই তার মধ্যে বেশি। তবে কৌশলগত ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান হওয়ায় আন্দামান সাগরে সব সময়ই কড়া নজরদারি চালায় ভারতীয় নৌবাহিনী।
আন্দামান সাগরে অন্য দেশের জাহাজ ঢুকে পড়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। কিন্তু সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ ঢোকা আর চীনের মতো অম্ল-মধুর সম্পর্কের প্রতিবেশীর রণতরী ঢুকে পড়া সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
ভারতীয় জলসীমায় অন্য দেশের জাহাজ ঢুকলেই কোস্টাল রেডার সঙ্কেত পাঠাতে শুরু করে। মঙ্গলবারও একটি অপরিচিত জাহাজ আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ৫০০ কিলোমিটার সীমার মধ্যে ঢুকতেই সেই রকম সঙ্কেত পেয়েছিল নয়াদিল্লি। অযাচিত অনুপ্রবেশের সঙ্কেত পেয়ে সতর্ক হয়ে যায় নৌবাহিনী।
বোঝার চেষ্টা হয় কোন দেশের জাহাজ আন্দামান সাগরে ঢুকেছে। অনুপ্রবেশকারী যুদ্ধজাহাজটি আসলে যে চিনা নৌবাহিনীর সাবমেরিন টেন্ডার, সে কথা বোঝার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। আন্দামান নিকোবর কম্যান্ডের (এএনসি) সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা হয়।
এএনসি দিল্লিকে জানায়, চিনা রণতরীর অনুপ্রবেশের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। নৌবাহিনীর টহলদারি জাহাজ রওনা দিয়েছে ঘটনাস্থলের দিকে। চিনা রণতরীর উপর সব দিক দিয়ে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর আন্দামান নিকোবর কম্যান্ডের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল পিকে চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, চীনা রণতরীর গতিবিধির উপর আমরা নজর রেখেছি। চীনা নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ যে এই প্রথম বার আন্দামান সাগরে ঢুকল তেমন নয়। পরিস্থিতি বদলেছে, তাই আন্দামান নিকোবরের সুরক্ষার উপর এখন অনেক বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
গত ৮-৯ মাসে আন্দামান নিকোবরের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো খুব দ্রুত বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। বেশ কিছু নতুন রেডার এসেছে। একটি সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ ইতিমধ্যেই টহল দিচ্ছে আন্দামান সাগরে। ফলে কোনও দেশ জলের তলায় লুকিয়ে হানা দেওয়ার চেষ্টা করলে, তা সফল হবে না। মিসাইল করভেট গোত্রের একটি বিশাল যুদ্ধজাহাজ ১ এপ্রিল আন্দামান নিকোবর কম্যান্ডের হাতে আসছে বলেও ভাইস অ্যাডমিরাল জানিয়েছেন।
কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারতের তিন সশস্ত্র বাহিনীই বিপুল সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করে রেখেছে। লুকিয়ে হানা দিয়ে সেই পরিকাঠামোর ক্ষতি করার চেষ্টা কোনও প্রতিপক্ষের তরফ থেকে হতেই পারে।
সে কথা মাথায় রেখেই দ্বীপপুঞ্জে সমরসজ্জা দ্রুত বাড়াচ্ছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী এক বছরের মধ্যে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারতের তিন বাহিনীর রণসজ্জা আরও ভয়ঙ্কর স্তরে পৌঁছবে। খবর নৌহাবিনী সূত্রে। চীনা যুদ্ধজাহাজের গোপন অনুপ্রবেশের চেষ্টা সাউথ ব্লকের তৎপরতা আরও বাড়িয়ে দিল।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস