আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত-শাসিত কাশ্মিরে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সিন্ধু নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত এবং উভয় দেশের মধ্যকার প্রধান স্থল সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
তবে ভারতের এসব ঘোষণাকে “শিশুসুলভ” বলে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। এদিকে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, আমরা বৈঠকে ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এই জবাব কম হবে না।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ভারতশাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করার বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার।
পাকিস্তানের একটি বেসরকারি চ্যানেলে তিনি বলেছেন, “ভারতের ঘোষণাগুলো শিশুসুলভ এবং এতে গুরুত্বের অভাব রয়েছে।”
তিনি আরও বলেছেন, “ভারত প্রতিটি ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং অতীতের মতো এবারও পাকিস্তানকে দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বৈঠকে ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এই জবাব কম হবে না।”
সিন্ধু পানি চুক্তি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, এই ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়েছে। ভারতের কাছে প্রমাণ থাকলে তা সামনে আনা উচিত।
এর আগে গত মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় ২৬ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন। এরপরে ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরোনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের আগামী পহেলা মে এর মধ্যে ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
এদিকে কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে পাকিস্তান তাদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, এ বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন এবং সাধারণত কেবলমাত্র বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা বহিরাগত হুমকির সময় এই ধরনের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার।
এছাড়া পাকিস্তান এই হামলাকে ভারতের “ফলস ফ্ল্যাগ (false flag)” অপারেশন বলে আখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তারা দাবি করছে, ভারত নিজেরাই এই হামলা সাজিয়েছে যেন পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো যায়। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর “প্রত্যুত্তরমূলক জবাব” দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এই হামলাকে “ফলস ফ্ল্যাগ” বলে উল্লেখ করেছেন এবং পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “এই সম্ভাবনাকে কখনোই পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না।”
উল্লেখ্য, কাশ্মিরের ভারত-শাসিত অঞ্চলে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মিরি মুসলিম বিদ্রোহীদের সমর্থন করেন এবং তারা চায়, অঞ্চলটি হয় পাকিস্তানে যোগ দিক অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক।
ভারত দাবি করে থাকে, এটি পাকিস্তান-প্রভাবিত “সন্ত্রাসবাদ”। অন্যদিকে পাকিস্তান বলে— এটি একটি বৈধ স্বাধীনতাকামী আন্দোলন। দীর্ঘ সংঘাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন।