আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বর্তমানে মুসলিম পোশাকের মধ্যে সবচাইতে বেশি বিতর্ক তোলা হচ্ছে হিজাব নিয়ে, যার মাধ্যমে নারীরা মুখ ঢেকে রাখেন। ইসলামে পর্দা ফরজ হওয়ায় মুসলিম নারীদের কাছে এটি বেশ প্রিয়। আর এজন্যই তথাকথিত নারীবাদীরা এই হিজাবকেই আক্রমণের টার্গেট বানিয়েছে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন যাবত নারীদের ওপর জোর জবরদস্তির প্রতীক।
শনিবার জাপানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক আসাচি শিম্বুনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানে বসবাসকারী একদল নারী এই ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন। তারা বলছেন যে- মুসলিম বিশ্বের নারীরা সবার সামনে এমন পোশাক পড়ার কারণ আর কিছু নয়, তাদের শালীনতা রক্ষা করা।
জাপানে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় একদল মুসলিম নারী হিজাব এবং মুসলিমদের অন্যান্য পোশাকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন রুচিসম্মত পোশাক হিসেবে। এসবের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করার মাধ্যমে তাদের আশা জাপানী নারীদেরকে ইসলামের অনুসারী বানানো।
জানুয়ারির শেষদিকে প্রায় ১০০ জন নারী জাপানের সবচেয়ে বড় মসজিদ টোকিও জামেতে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে তারা ঐতিহ্যবাহী হিজাব স্কার্ফ কিভাবে পরতে হয় তা শিখতে আসেন।
রঙবেরঙের স্কার্ফ মাথায় পেচিয়ে পিন দিয়ে এঁটে দেওয়া হয়। যেসব নারীরা ‘হিজাবের একদিন’ নামের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তারা আয়নায় তাদের নিজেকে দেখে উৎসাহিত হয়ে বলতে থাকেন ‘চমৎকার’ এবং ‘খুবই আকর্ষণীয়’।
মরোক্কোর এক মুসলিম নারী অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘আমাদের ধর্মে স্রষ্টা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ এবং হাতের প্রথমভাগ ব্যতিত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার। তাই হিজাব পরিধান করা আমাদের জন্য ইবাদত। যখন আমরা পর্দা করি তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং অন্যের কাছ থেকে সম্মান পেয়ে থাকি।’
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৪ জন মুসলিম নারী যারা জাপানে বসবাস করেন।
তাদের মধ্যে একজন ২৩ বছর বয়সী আরিসা সাকামোতো, যিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, অনুষ্ঠানে তিনি একটি ফুলের নকশা করা কালো স্কার্ফ পরেছেন। সাকামোতো জানান, তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বেশিরভাগ সময়ই ছোটখাট পোশাক পরতেন।
তিনি ইসলামে দীক্ষিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে মালয় বিষয় নিয়ে পড়ার সময়। ইসলামের সহিষ্ণু নিয়মনীতি, সব রকম প্রতিকূলতায় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ তাকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
তিনি হিজাব পরেন যাতে মানুষ জানতে পারে যে- তিনি একজন মুসলিম। তার বাবা-মা তাকে এ থেকে বেড়িয়ে আসতে বলেছেন। তবে কারণ তারা মনে করছেন এর ফলে তিনি নির্যাতিত হতে পারেন।
কিন্তু যখন তারা দেখলেন তার কন্যা খুব আন্তরিকভাবে তার বিশ্বাসের চর্চা করছে, সক্রিয়ভাবে তাদের সেবা করছে এবং সম্মান প্রদর্শন করছে তখন তার মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। এখন তিনি তার মেয়ের জন্য এমন পোশাক পছন্দ করেন যা হিজাবের সাথে মানিয়ে যায়।
সাকামোতো জানান, যখন থেকে তিনি হিজাব পরে বাইরে যান তখন অন্যান্য মুসলিম বোনেরা তাকে উৎসাহিত করেন। এছাড়াও বয়স্ক জাপানিরাও তার মাথা বন্ধনীকে ‘সুন্দর’ বলে প্রশংসা করেন। তবে সাকামোতো কাজের সময় হিজাব পরতে পারেন না।
তিনি বলেন, ‘আমি সেখানেও হিজাব পরতে চাই, কিন্তু এটা কঠিন কারণ সেখানে অল্প কয়েকজন মুসলিম রয়েছেন। আমার প্রথমে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে আমার আচার আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলাম বোঝানো।’
জাপানে অমুসলিম নারীদের মাঝে ইসলামি পোশাকের প্রতি আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলেছে। ‘হিজাবের একদিন’ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নারীদের অর্ধেকই অমুসলিম নারী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২২ বছর বয়সী আয়ানো অকি জানান, তিনি ফেসবুকে এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পেরে বন্ধুদের সাথে এখানে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘আগে আমার ধারণা ছিল মুসলিম নারীদেরকে হিজাব জোর করে পরানো হয়। তবে এখন আমার ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। এখানে এসে জানতে পারলাম এটা পুরোটাই মুসলিম নারীদের নিজের ইচ্ছাধীন ব্যাপার। এছাড়াও অনুষ্ঠানটি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে ভালো সুযোগ করে দিয়েছে, যেহেতু আমার কোনো মুসলিম বন্ধু নেই।’
৩৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষিকা শিনিচি অরিতা গত বছরের এপ্রিলে জাপান মুসলিম ফ্যাশন নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন পোশাক কোম্পানির মাধ্যমে জাপানের ঐতিহ্যবাহী কাপড় কিমোনো, সিল্ক ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে মুসলিম নারীদের পোশাক তৈরি করানো এবং ইসলামি বিশ্বে তা পরিচিত করানো।
অরিতা বর্তমানে জাপানি ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং ইসলামি পোশাকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ধরনের পোশাক উৎপাদন করার কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক চর্চা নিয়ে আসতে চাই যাতে মুসলিমদেরকে জানার প্রতি জাপানীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।’
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস