সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ০৭:৫৫:৩৯

হঠাৎ সোনার গহনা বেচাকেনায় হিড়িক!

হঠাৎ সোনার গহনা বেচাকেনায় হিড়িক!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গয়নার বাজারে সম্প্রতি দৃশ্যপট বদলেছে। হঠাৎ সোনার গহনা বেচাকেনায় হিড়িক! লস অ্যাঞ্জেলসের ডাউনটাউনের সেন্ট ভিনসেন্ট জুয়েলারি সেন্টারে প্রতিদিন লাখ লাখ ডলারের সোনা বেচাকেনা হচ্ছে। এর পেছনে বড় কারণ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং রেকর্ড ভাঙা সোনার দাম।

আলবার্তো হার্নান্দেজ, যিনি স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, কিছুদিন আগেই মেশিনে গলিয়ে ফেলেছেন আংটি, কানের দুল ও হার। প্রায় ১০০ গ্রাম বা ৩.২ ট্রয় আউন্স ওজনের এসব অলঙ্কার থেকে এক্স-রে মেশিনে দেখা গেছে, ৫৬.৫ শতাংশ সোনা রয়েছে। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ডলার।

কেন বাড়ছে সোনার দাম?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা ও আর্থিক অনিশ্চয়তা— এসব কারণেই সোনার চাহিদা বাড়ছে। বন্ধকি দোকানের মালিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই পুরনো গয়না বিক্রি করে তাৎক্ষণিক নগদ অর্থ পেতে চাইছেন। অন্যদিকে অস্থিতিশীল শেয়ারবাজারের তুলনায় সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করছেন অনেকে।

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গয়নাও গলিয়ে দিচ্ছেন মার্কিনীরা
এঅ্যান্ডএম প্রেশাস মেটালসের সাবাশডেন হার্নান্দেজ জানান, ‘অনেক র‍্যাপার এবং সাধারণ মানুষও তাদের দাদা-নানার পুরনো অলঙ্কার নিয়ে এসে গলিয়ে ফেলছেন।’ এমনকি ১৮০০-এর দশকের প্রাচীন পারিবারিক গয়নাও গলিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।

তবে গয়না ব্যবসায়ী অলিভিয়া কাজানজিয়ান মনে করেন, সব গয়না গলানো উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের টুকরো হিসেবে কিছু গয়নার মূল্য অনেক বেশি। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গয়নার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে।’ কাজানজিয়ান নিজেও সম্প্রতি ৩ হাজার ২০০ ডলার দিয়ে ১৪ ক্যারেট সোনার একটি নীল এনামেলের ব্রেসলেট কিনেছেন, যেটি তিনি গলাবেন না।

সোনার সরবরাহ সংকট ও চাহিদার চাপ
পেনসিলভানিয়ার স্টেফকো ক্যাশ ফর গোল্ড প্রতিষ্ঠানটির মালিক এডউইন ফেইহো বলেন, ‘মালামাল আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সবাই এখন দৌড়ের ওপর।’ তবে যেসব ব্যবসায়ী ইতালি, তুরস্ক কিংবা চীন থেকে গয়না আমদানি করেন, তাদের মুনাফার মার্জিন কমে যাচ্ছে। কারণ, সোনা কিনতে বেশি দাম গুনতে হচ্ছে এবং শুল্কও বেড়েছে।

ভিঅ্যান্ডপি জুয়েলারির পুজান্ট বারবেরিয়ান বলেন, ‘আমাদের লাভের মার্জিন খুবই কমে গেছে।’ তিনি জানান, সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা একটি প্যাকেজে তার বাড়তি ১৬ হাজার ডলার খরচ হয়েছে।

ক্রেতাদেরও ধাক্কা: দাম বেড়ে ৫০ শতাংশের বেশি
এক বছর আগেও ১০ গ্রাম ওজনের ১৪ ক্যারেটের সোনার ব্রেসলেটের দাম ছিল ৬০০ ডলার। এখন সেটি ৯০০ ডলারের কাছাকাছি। এ কারণে ক্রেতারাও হতাশ হচ্ছেন, কারণ আগের দামে এখন কিছুই কেনা যাচ্ছে না।

সোনার দাম আরও বাড়বে?

নিউপোর্ট গোল্ড পোস্ট ইনকের স্যাম নিউয়েন মনে করেন, সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। তার ধারণা, বছরের শেষে প্রতি ট্রয় আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

এ প্রসঙ্গে দ্য গোল্ড অ্যাডভাইজর-এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ ক্লার্ক বলেন, ‘যদি মন্দার আশঙ্কা থেকেই যায়, তাহলে সোনার দাম আরও বাড়বে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭০-এর দশকে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির সময় সোনার দাম ১৭ গুণ বেড়ে গিয়েছিল।

সোনা এখন নিরাপদ আশ্রয়
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে বাঁচতে মানুষ সোনার দিকে ঝুঁকছে। পুরনো গয়না বিক্রি করে নগদ অর্থ সংগ্রহ, সোনা গলিয়ে নতুনভাবে বিক্রি করা কিংবা সোনা বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদ রক্ষা— সব দিক থেকেই সোনা এখন নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে