আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে। যেখানে তাকে স্বাগত জানাতে আয়োজিত হয় একটি ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আবুধাবির কাসর আল ওয়াতান প্রাসাদে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী ‘আল আয়ালা’ নৃত্য, যেখানে সাদা পোশাক পরিহিত নারীরা ছন্দে ছন্দে সংঘবদ্ধভাবে তাদের চুল দোলান। সঙ্গে ছিল পুরুষদের ঢোল বাদ্যযন্ত্র ও কবিতা পাঠ।
এই ব্যতিক্রমী নৃত্যটি বিশ্বব্যাপী আলোচনায় ওঠে আসে। সামাজিক মাধ্যমে এই নৃত্যের ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়। অনেকেই এর ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনায় মুগ্ধ। কেউ কেউ এর অর্থ ও প্রেক্ষাপট জানতে চান, আবার কেউ কেউ একে ‘চুল ওড়ানো নাচ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনেকেরই কৌতুহল, অদ্ভুত এই নৃত্যের ইতিহাস কি? এটা কি নৃত্য নাকি কোনো সংস্কৃতি! চলুন জেনে নেই তাহলে এর ইতিহাস।
বিবিসির সূত্র মতে, ‘আল আয়ালা’ নৃত্যটি সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানের একটি ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য, যা ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত। এই নৃত্যে সাধারণত দুই সারিতে দাঁড়িয়ে পুরুষরা বাঁশের লাঠি হাতে যুদ্ধের দৃশ্য অনুকরণ করেন। তাদের সঙ্গে নারীরা চুল দোলান, যা আনন্দ ও জাতীয় গর্বের প্রতীক।
শুরুতে এই নাচ ছিল পুরুষদের বিশেষত্ব। সামনাসামনি দুটি সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পুরুষদের। তাদের হাতে থাকে বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট একধরনের লাঠি। গান ও কবিতার তালে তালে এই লাঠি ওঠানো ও নামানো হয়। মাঝখানে একদল লোক ঢোল বাজান।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত পুরুষদের পাশাপাশি আই-আইয়ালা গানের নারীদের যুক্ত করে। রঙিন পোশাক ও সাজে নারীরা অংশ নেওয়া শুরু করেন। বিশেষত্ব হয়ে দাঁড়ায় চুল এক পাশ থেকে অন্য পাশে নেওয়া। সেটাকে বলা হয় চুল ওড়ানো নৃত্য বা আই-আইয়ালা ড্যান্স। এই নাচ ও গান বেদুইন সংস্কৃতিতে ছিল পুরুষদের পক্ষ থেকে দেওয়া সুরক্ষার প্রতি মেয়েদের বিশ্বাস ও আস্থা প্রকাশের একটি উপায়। যারা এটি পরিবেশন করেন, তাঁরা বিভিন্ন জাতি ও বয়সের হয়ে থাকেন। প্রধান শিল্পী এই দায়িত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে পান এবং তাঁর ওপর দায়িত্ব থাকে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। শতাব্দী ধরে কাতার, সৌদি আরব ও বাহরাইনের মতো দেশে এই আল-আয়ালা নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুষ্ঠানটি দারুণ উপভোগ করেছেন বলেই জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটি ভালোবেসেছি!’ তিনি আবুধাবিকে সুন্দর শহর হিসেবেও অভিহিত করেন এবং এই সাংস্কৃতিক অভ্যর্থনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আধুনিক কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি অনন্য সংমিশ্রণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সফরের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।