আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসার পরই নিজের অভিবাসী বিদ্বেষী লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবৈধ অভিবাসীমুক্ত আমেরিকা গড়তে ‘উন্মাদ’ হয়ে উঠেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে দেশজুড়ে। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত পাঁচ শহরে রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছে অভিবাসীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।’
বুধবার আন্তর্জাতিক গণমাধম্যের খবরে বলা হচ্ছে, হোয়াইট হাউজের কঠোর নির্দেশে এবার প্রতিদিন ৩০০০ অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের টার্গেটে নেমেছে সংস্থাটি। রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস, ডেইলি মেইল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ঘটনার আগ থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযান চলছিল যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। তখন আইসিই’র টার্গেট ছিল প্রতিদিন ১০০০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করবে তারা। কিন্তু অভিবাসীদের শহরখ্যাত লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকাণ্ডে আইসিই’র আটক টার্গেট দাঁড়িয়েছে তিনগুণ। অর্থাৎ বছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে দশ লাখ। এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত পাঁচ এলাকায় কৌশলগত ইউনিট মোতায়েন করছেন ট্রাম্প প্রশাসন।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক ধাঁচের সেসব ইউনিটগুলো নিউইয়র্ক সিটি, সিয়াটল, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া এবং উত্তরের জ্যামিয়ায় আটক অভিযান চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়া, নেব্রাস্কা রাজ্যের বেশ কয়েকটি খামার ও কারখানায় অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। আটক অভিযানকে আরও ত্বরান্বিত করতে নতুন নতুন কৌশলও অবলম্বন করছে আইসিই। গ্রেফতারের লক্ষ্য পূরণে ভাড়া করা হচ্ছে বিশেষ এজেন্ট। সপ্তাহে ৭ দিনই অবৈধ অভিবাসী সম্পর্কিত বিভিন্ন টিপস দিয়ে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে। এছাড়া সংস্থাটি অবৈধ অভিবাসনের খবর জানাতে জনসাধারণকে একটি টিপ লাইন ব্যবহারের জন্যও অনুরোধ করছে।
গত মাসে ফোন টিপের ভিত্তিতে অফিসাররা বাল্টিমোরের একটি পার্কিং লটে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতারের ভিডিও অনলাইনে পোস্টও করেছিল আইসিই। সেখানে ক্যাপশনসহ তারা লিখেছিল, ‘যখন আপনি আমাদের টিপ লাইনে কল করেন, আমরা শুনি!’ এছাড়া আরও নানা অভিনব কৌশলে আটক অভিযান চালাচ্ছে আইসিই। সহায়তা নিচ্ছেন উন্নত প্রযুক্তির।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে প্রাপ্ত নথি অনুসারে, আইসিই নিজেদের কাজে একটি নতুন ম্যাপিং অ্যাপের সাহায্য নিচ্ছে। এটি নির্বাসনের আদেশপ্রাপ্ত অভিবাসীদের শনাক্ত করে যা তাদের দ্রুততম উপায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করছে। অ্যাপটিকে একটি প্রাথমিক সংস্করণ এলিয়েন ট্র্যাকার বা অ্যাটাক বলা হতো।
এ বিষয়ে মার্কিন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের সহকারী পরিচালক গ্যারেট জে. রিপা বলেন, ‘মোবাইল ফোনে অ্যাক্সেসযোগ্য এই সফটওয়্যারটি সারা দেশে নির্বাসনের আদেশপ্রাপ্ত অভিবাসীদের অবস্থান শনাক্ত করে। এমনকি অফিসারদের নির্দিষ্ট অপরাধমূলক দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ওপর নজর রাখার অনুমতি দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘হিট ম্যাপটি দেশজুড়ে কোথায় বহিষ্কারের চূড়ান্ত আদেশ কার্যকর করা হয়েছে তা দেখায় এবং সেই কর্মকর্তা তখন কেবল সেই অঞ্চলগুলোতে জুম ইন করতে পারেন।’
জানা গেছে, এই অ্যাপটিতে ৭ লাখেরও বেশি মানুষের তথ্য রয়েছে। এটি কেবল আইসিই’র তথ্য নয়, বরং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য থেকে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আইসিই’র একজন মুখপাত্র অ্যাবিগেল জ্যাকসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে প্রশাসন। লস অ্যাঞ্জেলেসে সহিংস দাঙ্গা, ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের ওপর আক্রমণ এটাই বোঝায় যে, অবৈধ অভিবাসীদের অপসারণ কেন এত জরুরি।’