আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ৮৬ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্রমেই একা হয়ে পড়ছেন। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় সামরিক ও গোয়েন্দা উপদেষ্টাদের নিহত হওয়ার পর তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যন্তরীণ বলয় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে পাঁচটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান আমির আলি হাজিজাদেহ এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি। তারা সবাই খামেনির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি এখন অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
খামেনি ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগেই কারাবরণ করেন ও পরে এক বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন। ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে অটল থেকেছেন এবং পশ্চিমা শক্তির প্রতি গভীর অবিশ্বাস প্রকাশ করে আসছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ভাটাঙ্কা বলেন, খামেনিকে দুটি শব্দে ব্যাখ্যা করা যায়। তা হলো তিনি চরমভাবে জেদি, কিন্তু একই সঙ্গে খুব সতর্ক। এই সতর্কতাই তাকে এত বছর টিকিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, খামেনি সব সিদ্ধান্তে মূল লক্ষ্য রাখেন একটি বিষয়ের দিকে তা হলো শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা।
বিগত কয়েক দশকে ১৯৯৯, ২০০৯ এবং ২০২২ সালে দেশজুড়ে গণআন্দোলন মোকাবিলায় বিপ্লবী গার্ড এবং বাসিজ মিলিশিয়াকে নামানো হয়েছে। যদিও এসব আন্দোলন শেষ পর্যন্ত দমন করা গেছে, তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থায় জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় অভ্যন্তরীণ সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে।
এদিকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছে। ইসরায়েল ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা বাড়িয়েছে এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
যদিও সামরিক উপদেষ্টাদের অনেকে নিহত হয়েছেন। তবে খামেনির রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা এখনও সক্রিয় এবং প্রভাবশালী। এর মধ্যে রয়েছেন তার পুত্র মোজতবা খামেনি। তাছাড়া তাকে ইরানের ক্ষমতাকাঠামোর ঘনিষ্ঠ মহলে ভবিষ্যৎ সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মধ্যম স্তরের এক ধর্মীয় নেতা হিসেবে তিনি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, যা তাকে ইরানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাড়তি প্রভাব দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এছাড়া, খামেনির কার্যালয়ের রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-প্রধান আলী আসগর হেজাজি ইরানের স্পর্শকাতর নিরাপত্তা সিদ্ধান্তগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাকে ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া রয়েছেন খামেনির কার্যালয়ের প্রধান মোহাম্মদ গোলপায়েগানি, রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-প্রধান আলী আসগর হেজাজি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর বেলায়েতি ও কামাল খারাজি, এবং সাবেক পার্লামেন্ট স্পিকার আলী লারিজানি।
অন্যদিকে খামেনি শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আঞ্চলিক ‘অক্ষ প্রতিরোধ’ জোটেও বড় ক্ষতির সম্মুখীন। গত বছর সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। আর ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন।
এই দুই নেতাই ছিলেন খামেনির ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক মিত্র। তাদের অনুপস্থিতি খামেনির কৌশলগত অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। সূত্র: রয়টার্স